অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সরকারের পরামর্শে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের কথিত ৫৮ দলীয় জোটে নতুন একটি সংগঠনের নামে অংশ নিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একাংশ।
গত ৭ মে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট এবং জাতীয় ইসলামি মহাজোট ও বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) সমন্বয়ে ইউএনএ নামে ‘ঢাউস আকারের’ এই জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন এরশাদ। এতে সর্বমোট দল ৫৮টি। সংখ্যার দিক থেকে এটি দেশের বৃহত্তম জোট, যদিও এর মধ্যে ৫৬টি দলই নামসর্বস্ব।
তবে জোট গঠনের ৯ দিনের মাথায়ই এটি ভাঙনের মুখে পড়ে। জোটে থাকা নামসর্বস্ব ২১-দলীয় জোট বিএনএ ভেঙে গেছে। সেখান থেকে ১১টি দল বেরিয়ে গত ১৬ মে রাতে একই নামে আলাদা জোট গঠন করে।
জানা গেছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে যদি বিএনপি-জামায়াত জোট আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে আগেরমতো এরশাদের জাতীয় পার্টিকেই আওয়ামী লীগের বিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হবে। এ লক্ষ্যে এরশাদকে দিয়ে ৭০ দল বিশিষ্ট বড় আকারের একটি রাজনৈতিক জোট করানোর পরিকল্পনা করে সরকার। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বশেষ ৭০ দলের বদলে নামসর্বস্ব ৫৮টি দলের সমন্বয়ে একটি বৃহৎ জোট গঠন করে এরশাদ।
জানা গেছে, এরশাদের এই জোটে বেশ কয়েকটি ইসলামী দলকে ভিড়ানোর লক্ষ্যে চরমোনাইসহ বেশ কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ শুরু করে সরকার। এতে সরকার সফলও হয়। সরকারের আশ্বাসে এমপি মন্ত্রী হওয়ার আশায় বেশ কিছু ইসলামী দল এই জোটে নিজেদেরকে যুক্ত করে। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নিজেরা স্বয়ং যুক্ত না হয়ে তাদের দলের একাংশকে নতুন একটি সংগঠনের নামে এই জোটে শরিক করায়।
চরমোনাইর এর একাংশের সমন্বয়ে গঠিত নতুন দলটির নাম শরিয়াহ আন্দোলন বাংলাদেশ। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা আমির মুফতী রফিকুন্নবী হক্কানী, মহাসচিব মুফতী মোহাম্মাদ মুহিববুল্লাহ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাসুম বিল্লাহ। এর সবাই চরমোনাই এর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সক্রিয় সদস্য ও দায়িত্বশীল। প্রতিষ্ঠাতা আমির মুফতি রফিকুন্নবী হাক্কানী চরমোনাই এর বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির হাজারিবাগ থানার নায়েবে সদর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ২৫ মে ‘শরীয়াহ আন্দোলন বাংলাদেশ’ এর আয়োজনে ‘নৈতিকতা বিবর্জিত সমাজ ব্যবস্থাই সকল সন্ত্রাসের জন্মদাতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। সেই প্রোগ্রামের পোষ্টারে উল্লিখিত নাম ও সংগঠনটির মিরপুর জোনের মিটিংয়ের ছবি মারফত জানা যায়, মুফতী হাবীবুর রহমান মিছবাহ ও আব্দুল খালেক শরীয়তপুরীসহ আরো বেশ কয়েকজনের চরমোনাই সমর্থক ওয়ায়েজিন এই সংগঠনের সাথে রয়েছেন। তবে তারা আপাতত দলের কোনো দায়িত্বে নিয়োজিত নন।
এদিকে চরমোনাইয়ের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা সরকারের পরামর্শে দলের একাংশকে দিয়ে নতুন দল গঠন করিয়ে এরশাদের জোটে শরিক করালেও দলের মাঠ পর্যায়ের কর্মী ও মুরিদরা কেউই এ সম্পর্কে জানেন না। যার ফলে চরমোনাইয়ের ঐ একাংশের প্রতি তারা ক্ষুব্ধ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে শরীয়াহ আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাদের উপর তাদের ক্ষোভ ঝাড়তেও দেখা গেছে। অনেকেই তাদেরকে দলচ্যুত হয়ে এরশাদের মত লোকের সাথে জোট করায় ধিক্কার জানিয়েছেন। মুরিদদের কটুক্তির প্রতিবাদে নতুন দলের আমির রফিকুন্নবী হাক্কানী সরাসরি চরমোনাই পীরের সিদ্ধান্তেই সব হচ্ছে এমনটা জানাতে না পারলেও ফেসবুকে পোষ্ট করে বলেছেন, শরীয়াহ আন্দোলন বাংলাদেশ চরমোইন বিরোধী নয়. বরং চরমোনাইসহ সকল আহলে হক দলের সহযোগী।
চরমোনাই মুরিদদের বাইরে সাধারন মানুষও চরমোনাইয়ের এমন সুবিধাবাদি আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সভা সমাবেশে সরকারের বিরুদ্ধে লোক দেখানো হুংকার ছুঁড়লেও সবসময়ই তারা সরকারের সাথে আতাঁত করে চলেছে। নইলে বেশিরভাগ ইসলামী দলকেই সরকার রাজপথে কোনো প্রকারের মিছিল মিটিং করতে না দিলেও তাদেরকে পুলিশি পাহারায় সমাবেশ ও মিছিল করতে দিবে কেনো? এর আগেও ২০০১ সালে চরমোনাই পীরের দল এরশাদের সাথে জোট করেছিল। তখনও ব্যাপক সমালোচিত হয় তারা।
বিশিষ্টজনদের মতে, সরকার যেই উদ্দেশ্যে এরশাদকে দিয়ে তথাকথিত জোট করাচ্ছে, সেই উদ্দেশ্য সফল হবে না। এরশাদের তথাকথিত ঢাউস জোটে ৯ দিনের মাথায়ই ভাঙন ধরেছে। ১১ দলই বের হয়ে গেছে। এখন বাকি আছে ৪৭টি। এগুলোও সবগুলোই নামসর্বস্ব দল। দুটি ছাড়া বাকিগুলোর নিবন্ধনও নেই। সুতরাং এরশাদকে বলির পাঠা বানিয়ে কিংবা গুটিকয় ইসলামী দলকে এমপি মন্ত্রীর লোভ দেখিয়ে জোটে ভিড়িয়ে ৫ জানুয়ারির মত আরেকটি কলঙ্কিত নির্বাচন এদেশে আর সম্ভব নয়।
Discussion about this post