আনন্দবাজার পত্রিকারে একটা পুরস্কার দেওয়ার কথা বলছিলেন আহমদ ছফা, সেই ১৯৯৩ সালে। যখন এই নাদান পত্রিকা বাংলা একাডেমীরে তাদের আনন্দ পুরস্কার দিতে চাইছিল। একাডেমী তখন সেইটা প্রত্যাখ্যান করে। (এখন হইলে করত কি? আপনাদের কাছে প্রশ্ন।)
আমাদের—বাংলাদেশের—কী করতে হবে তা যেন সর্বক্ষণ শিখাইয়া দিতে চায় আনন্দবাজার পত্রিকা।
বাংলা একাডেমীরে পুরস্কার গছাইতে ব্যর্থ হওয়ার পরের বছর ১৯৯৪ সালে ড. আনিসুজ্জামানরে তারা আনন্দ পুরস্কার দিছিল। (লগে আরো তিনজনরে এই পুরস্কার ভাগ কইরা দেয় তারা। খুব গৌণ কারণে। তার উল্লেখ এইখানে আর না করি।)
২০১৭-তে আইসা আবারও আনিসুজ্জামানরে, তার দুই বছর আগের (২০১৫, প্রকাশক প্রথমা) প্রকাশিত বই ‘বিপুলা পৃথিবী’র জন্যে, কেন আনন্দ পুরস্কার দিতে হইল! বাংলাদেশে এই মাপের লোক আর নাই সেইটা তারা আমাদের শিখাইতে চায়, তা ঠিক আছে। এই রকম কেউ হয়ত বাংলাদেশে সত্যিই নাই যে আনন্দবাজারের সঙ্গে পুরাপুরি যাইতে পারবে!
তা, পুরস্কার দেওয়ার অনেক যুক্তিসঙ্গত কারণ নিশ্চয়ই আছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বে কাজ নাই। বরং তারা যা বলতেছেন তা বোঝার চেষ্টা করি। ১৫ এপ্রিলে পুরস্কার দেওয়ার পর পত্রিকার ২৯ এপ্রিল সংখ্যার নিবন্ধে যে বার্তা তারা দিতে চাইলেন তারে আমরা গুরুত্ব দিব কি? দেই বা না দেই আপাতত এটির উল্লেখ করা যাক:
“আনিসুজ্জামানের আত্মজীবনীর প্রথম দুই খণ্ড ‘কাল নিরবধি’ ও ‘আমার একাত্তর’ সাহিত্যরসিকের কাছে পরিচিত। তৃতীয় খণ্ডের বৃত্তান্ত শুরু যুদ্ধশেষে লেখক যখন দেশে ফিরছেন। রাস্তায় ভাঙা রেলসেতু, পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত বাঙ্কার। কিন্তু যুদ্ধজয়ই শেষ নয়। তার পরই আসল কাজ: দেশটাকে গড়ে তোলা। সেই গড়ার প্রাক্কালে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন ছাত্র দাবি তুললেন, তাঁদের হস্টেলের মেসে গরুর গোশত খাওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে। আনিসুজ্জামান হতভম্ব। পাকিস্তান আমলেও ছাত্ররা এ-হেন অন্যায় আব্দার ধরেনি।” – (‘নির্মোহ, অন্তরঙ্গ সমাজ-ভাষ্যকে আনন্দ-সম্মান‘, গৌতম চক্রবর্তী, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৯/৪/২০১৭)
হোস্টেলের মেসে গরুর গোশত খাওয়া যে অন্যায় এই হিন্দু পত্রিকাটি আমাদের তা শিখাইতে চায়, ড. আনিসুজ্জামানের বরাতে। আসুন আমরা তা শিখতে চেষ্টা করি।
ব্রাত্য রাইসু এর ফেসবুক থেকে
Discussion about this post