কোটা বলতে কোনো কিছুর নির্দিষ্ট একটি অংশকে বোঝায় যা সাধারণত একটি গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ থাকে। মূলত সমাজের পিছিয়ে পড়া বা অনগ্রসর মানুষগুলোকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে পড়াশোনা, চাকরিসহ নানা ক্ষেত্রে কোটার ব্যবস্থা থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে। সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটা বাতিল করে কেবল ‘অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ রেখে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের পরিপত্র জারির আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, জেলা, নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী- এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল।
কোটার ইতিহাস
কোটা ব্যবস্থা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। এটা পাকিস্তান আমল তথা ১৯৪৯ সাল থেকে চালু হয়ে এসেছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দেখলেন পাঞ্জাবের মানুষরা যেমন শিক্ষিত ও স্মার্ট অন্য জাতিরা তা নয়। বিশেষ করে বাঙালিরা হলো পাকিস্তানের মেজরিটি। কিন্তু তারা পড়াশোনা ও চাকুরিতে বেশ পিছিয়ে।
এছাড়াও পাঞ্জাবে বসতি গড়া ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিম মুহাজিররা ছিল পূর্ব বাংলা, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের জনগোষ্ঠীর চাইতে পড়ালেখায় অনেক অগ্রসর। এই জনগোষ্ঠীর তুলনামূলক অনগ্রসতার কারণ ছিল অর্থনৈতিক এবং কিছুটা সামাজিক। তখন থেকেই তিনি সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে অনগ্রসর জাতি গোষ্ঠীগুলোর জন্য কোটার ব্যবস্থা করার কথা ভাবছিলেন।
১৯৪৮ সালের শুরুতেই পাকিস্তান পরিচালনা করার জন্য কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসের (বাংলাদেশে বিসিএস নামে পরিচিত) পরীক্ষা হয়। সেই ১ম শ্রেণির চাকুরির পরীক্ষায় মেজরিটি বাঙালিরা খুবই কম অংশ নিয়েছে। কৃতকার্যও হয়েছে অনেক কম। এই পরিস্থিতিতে কোটা সিস্টেম চালু করার সিদ্ধান্ত নেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তিনি যে ধারণা দেন তা হলো মেধার ভিত্তিতে ২০% চাকুরি পাবে। আর বাকী ৮০% বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।
১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কোটা সিস্টেম চালু হয়। এখানে ২০% ছিল মেধার ভিত্তিতে, ৪০% ছিল বাঙালিদের জন্য বরাদ্দ, পাঞ্জাব ও বাহাওয়ালপুরের জন্য ২৩%, সিন্ধ, বেলুচ ও সীমান্ত প্রদেশের জন্য ১৫% ও করাচির জন্য ২% চাকুরি বরাদ্দ থাকে। আওয়ামীলীগের বর্তমান এমপি ও সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান ছিলেন ৪০% কোটায় চাকুরি পাওয়া বাঙালি সিভিল অফিসার। তার ভাষ্যমতে মেধা কোটায় কখনোই বাঙালিরা চাকুরি পেত না। ঐ ৪০% সিট যদি বরাদ্দ না রাখা হতো তবে তাদের ১ম শ্রেণির অফিসার হওয়া দূরহ হতো। জিন্নাহসহ পাকিস্তানের অবাঙ্গালি শাসকেরা পিছিয়ে পড়া বাঙ্গালিদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের আমলে চালু হওয়া প্রথম কোটা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ পাকিস্তানের অনুসরণ করে। অর্থাৎ ২০% মেধা আর বাকীটা জেলা কোটা। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশন ও দফতরে নিয়োগ এবং কোটা বণ্টনের বিষয়ে ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ মেধা এবং বাকি ৮০ শতাংশ জেলা কোটা রাখা হয়। এই ৮০ শতাংশ জেলা কোটার মধ্য থেকেই ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ শতাংশ কোটা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অর্থাৎ কোটার বড় একটি অংশই বরাদ্দ করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য।
এর চার বছর পর অর্থাৎ ১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো কোটা বণ্টনে পরিবর্তন আনে জিয়াউর রহমান। এ সময় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো হয় এবং শুধু নারীদের জন্য আলাদা করে কোটার ব্যবস্থা করা হয়। সেসময়ে মোট কোটার ৪০ শতাংশ মেধা, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারী এবং বাকি ১০ শতাংশ কেবলই জেলার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।
১৯৮৫ সালে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে আবারো কোটা সংস্কার করা হয়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের কোটায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে ১৯৮৫ সালে কোটা পদ্ধতির সংশোধন আনা হয়। এতে বলা হয়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদসমূহের জন্য মেধাভিত্তিক কোটা হইবে ৪৫ শতাংশ এবং জেলাভিত্তিক কোটা হইবে ৫৫ শতাংশ। এই জেলাভিত্তিক কোটার মধ্য হইতে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ, নারীদের ১০ শতাংশ এবং উপ-জাতীয়দের জন্য পাঁচ শতাংশ পদ সমন্বয় করিতে হইবে।
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা চাকুরি পাওয়ার সুযোগ থাকে না ৯০ সাল থেকে। তখন থেকে মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের যেন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরির ব্যবস্থা করা হয়। শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৯৯৭ সালে। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থী পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যার জন্য তা বরাদ্দের আদেশ জারি করা হয়। এর কিছুদিন পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা কোটার পরিমাণ অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগ পাচ্ছেন না মর্মেও বেশ কয়েকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
২০০২ সালে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে আরেকটি পরিপত্র জারি করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ কোটা বণ্টনের বিষয়ে আগের জারি করা পরিপত্র বাতিল করা হয়।
২০০২ বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত ৩০ শতাংশ কোটা অন্য প্রার্থী দ্বারা পূরণ না করে সংরক্ষণ করার যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, তা সংশোধনক্রমে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে ২১তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত ৩০ শতাংশ কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে উক্ত কোটার শূন্যপদগুলো (ক্যাডার ও নন-ক্যাডার) মেধাভিত্তিক তালিকায় শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদেরকে দিয়ে পূরণ করা যেতে পারে। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৩০ শতাংশে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকার প্রার্থী থেকে নিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করে ২০০৯ সালে এই নির্দেশনা বাতিল করে। একইসাথে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ করা সম্ভব না হলে পদ খালি রাখার নির্দেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়। কোটায় পরবর্তী পরিবর্তন আসে ২০১১ সালে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদেরও ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সবশেষ ২০১২ সালে এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা যুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
যেভাবে শুরু হয় কোটা আন্দোলন!
বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রশিবির সর্বপ্রথম ১৯৯৬ সালে কোটাসংস্কার দাবি উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অংশ নেওয়ার মতো কোনো প্রার্থী ছিল না তাই ছাত্রশিবির ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে তা মেধা কোটায় যুক্ত করার প্রস্তাব করেছিল। ২০০২ সালে ছাত্রশিবিরের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে খালেদা নেতৃত্বাধীন জোট সরকার কোটা প্রথা কিছুটা সংস্কার করে।
এরপর ২০০৮ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলন করে। ২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩য় প্রজন্মকেও কোটায় অন্তর্ভুক্ত করলে ছাত্রশিবির কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। ছাত্রশিবিরের ওপরে ম্যাসাকারের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ে। ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীকে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হতে হয় কটা সংস্কারের দাবি উত্থাপনের অভিযোগে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের এই দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের গণদাবিতে পরিণত হয়।
কোটা সংস্কার কেন জরুরি?
প্রথমত কোটার বড় অংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা দাবী করার জন্য কোনো মুক্তিযোদ্ধা অবশিষ্ট নেই। তাদের নাতিপুতিদের জন্য এই কোটা বরাদ্দ রেখে সারাদেশের ছাত্রদের বঞ্চিত করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুযায়ী নিবন্ধিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই-আড়াই লাখ, অর্থাৎ এক হাজার মানুষের মাঝে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১.২ জন বা ১.৫ জন। যা সমগ্র জনসংখ্যার ০.১২/০.১৫ শতাংশ। ০.১২ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার জন্য কোটার পরিমাণ ৩০ শতাংশ। যা হাজারে রূপান্তর করলে দেখা যায়, এক হাজার জনতার মাঝে ১ থেকে ১.৫ (দেড়) জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য কোটার পরিমাণ ৩০০। এর মতো বড় বৈষম্য আর কী হতে পারে!
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫৫ শতাংশের বেশি কোটা রয়েছে যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক কোটা ১০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। তবে নিয়ম অনুসারে এসব কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১৯ (১), ২৯ (১) ও ২৯ (২) অনুচ্ছেদ সমূহে চাকুরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০% বরাদ্দ রেখে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, কোটা রাখতে হয় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য। অথচ জন্ম থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতিপুতিরা সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। একজন ব্যক্তি হাসপাতাল, ট্রেন, বাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পেয়ে আসছে। সে কীভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হয়!
১৮ সালের আন্দোলন:
সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে কোটার পরিমাণ বেশি থাকায় এটি নিয়ে বরাবরই অসন্তোষ ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্রদের দাবীকে সামনে রেখে ছাত্রশিবির বেশ কয়েকবারই কোটা সংস্কার আন্দোলন করে। তবে তা ছিল সীমিত আকারে। কোটা আন্দোলন প্রথমবারের মতো বড় আকারে রূপ নেয় ২০১৮ সালে। ওই বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল এবং এর পুর্নমূল্যায়ন চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও দুই সাংবাদিক।
এতে কোটা পদ্ধতিকে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মার্চ মাসে এসে ওই রিটটি খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। এদিকে আদালতে রিট করার পরপরই ফেব্রুয়ারি মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘কোটা সংস্কার চাই’ নামে একটি পেইজ খোলা হয় এবং শাহবাগকে কেন্দ্র করে তাতে মানবন্ধনসহ নানা কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া শুরু হয়। এর মাধ্যমেই মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে।
এ সময় কোটা সংস্কারের উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মও গঠন করা হয়। রিট খারিজ হওয়ার পর কোটা পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন করা হবে না মর্মে আদেশ জারি করা হয়। তবে কোটা কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা আনে সরকার। জনপ্রশাসন থেকে জারি করা ওই আদেশে বলা হয়, ‘সব ধরনের সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দিয়ে সেসব পদ পূরণ করা হবে।’ এটা ছিল ২০০২ সালে ছাত্রশিবিরের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে জোট সরকারের সময়কার সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ ২০০২ সালে আদেশের মাধ্যমে যেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ না হলে কোটা খালি রাখার কথা বলা হয়েছিল, সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার এবং মেধা তালিকা থেকে নিয়োগের কথা জানায়।
তবে দাবি আদায়ে অনড় থাকে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি ছিল ৫ টি।
১. সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বর্তমান কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা।
২. কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া।
৩. সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণ।
৪. কোটায় কোনও ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না রাখা।
৫. চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা।
এ সময় আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি চালানোসহ কয়েকজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই বছর এপ্রিলে এই আন্দোলন সর্বব্যাপী রূপ লাভ করে। শাহবাগ থেকে ডাকা আন্দোলনে অংশ নিয়ে সারাদেশেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। টানা আন্দোলন কর্মসূচির মুখে ১১ এপ্রিল সংসদে দাঁড়িয়ে সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় আরো পরে- অক্টোবর মাসে।
এ সময় নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ১৪তম থেকে ২০তম অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদগুলোতে কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা থেকেই নিয়োগের কথাও জানানো হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণার পর থেকে পরিপত্র জারি করা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ওপর হামলা ও গ্রেফতারের বেশ কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে আসে।
২৪ সালের আন্দোলন:
কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। গত ৫ জুন ২০২৪ তারিখে তাদের পক্ষে রায় আসে, অর্থাৎ আগের মতো কোটা বহাল হবে বলে জানান আদালত। এদিকে হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। সেই আবেদন গত ৪ জুলাই শুনানির জন্য এলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এরই মধ্যে ১ জুলাই থেকে কোটা বাতিলে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে’ এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
Discussion about this post