অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
চৈত্র মাসের শেষের দিকেই ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে একের পর এক তালিয়ে যাচ্ছিলো সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও জামালপুরের বিভিন্ন হাওরের ধান। ১ বৈশাখের আগেই হাওরের অধিকাংশ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। সর্বহারা কৃষকের কান্নায় যখন আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠছিল তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার বৈশাখী উৎসব ও মঙ্গলবাযাত্রা নিয়ে ব্যস্ত। নি:স্ব কৃষকদের দিকে সরকারের কোনো খেয়ালই ছিল না।
এদিকে, ধান তলিয়ে যাওয়ার পর যখন ভারতের ইউরেনিয়াম মিশ্রিত পানিতে মাছ ও হাঁস মারা যাচ্ছে তখন কয়েকটি মিডিয়া বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করে। এতে সরকারের কিছুটা টনক নড়ে।
গতকাল সরকার ৩ লাখ পরিবারকে সাহায্য দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু, খবর নিয়ে জানা গেছে, হাওরের ৬টি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। সেই তুলনায় সরকারের ঘোষিত ত্রাণের পরিমাণ একেবারেই যৎসামান্য। এই সামান্য ত্রাণ দেয়ার কথা বলে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে উপহাস করছেন বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। মানবধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল আজ এনিয়ে সরকারের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। হাওর এলাকাকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করার জন্যও তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, সরকারের এই যৎসামান্য ত্রাণ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের হাতে পৌছার আগেই তা প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সরকার।
জানা গেছে, আজকে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হাওর এলাকায় সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করতে মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হাওরে বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ দিচ্ছে সরকার। সরকারের এ ত্রাণ কার্যক্রম যেন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। যাতে জনগণ জানতে পারে দুর্গত মানুষের পাশে সরকার আছে। তাদের জন্য সরকার কাজ করছে। এসব বিষয় যেন জনগণ জানতে পারে।
রাজনীতিক বিশ্লেষক ও সচেতন মানুষ মনে করছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখানেও প্রধানমন্ত্রী ভোটের রাজনীতি শুরু করেছেন। ত্রাণ না দিয়েই প্রধানমন্ত্রী প্রচার করতে চাচ্ছেন যে তারা জনগণের পাশে আছে।
অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রাণের প্রচার চাইলেও হাওরের ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানের কোনো প্রচার চাচ্ছেন না। জানা গেছে, সরকারের মন্ত্রী ও সচিবরা গণমাধ্যমকে ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান বলায় প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আপনারা বলছেন হাওরে বন্যায় এত মাছ মরেছে, এত ধান নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এই পরিমাণ কে মেপেছে? কিসের ভিত্তিতে এ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হলো? জানা গেছে, এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, সরকার আসলে কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য প্রকাশ হলে হাওর এলাকাকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা দিতে তখন সরকার বাধ্য হবে। তখন এসব তদন্তে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও আগ্রহ প্রকাশ করবে। দেখা যাবে তখন থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে পারে। কারণ, হাওরের বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে সরকারের মন্ত্রী ও আমলারা জড়িত। তাদের দুর্নীতির কারণেই আজ এত বড় ক্ষতি হয়েছে। তারপর মাছ ও হাঁস মরে যাওয়ার বিষয়টি সঠিক তদন্ত করলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসতে পারে। এসব কারণে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য সরকার ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে।
Discussion about this post