অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের শুরুতেই অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। গত ৪ এপ্রিল বুধবার সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, আই উইল রিটায়ার ইন টু থাউজ্যান্ড এইটটিন। আই থিংক ইট উইলবি গুড টাইম। দ্যাট টাইম আই উইল বি এইটি ফাইভ অর্থাৎ আমি ২০১৮ সালে অবসরে যাব। আমি মনে করি এটা একটা ভাল সময়। তখন আমার বয়স হবে ৮৫)। এর আগে তিনি সংসদ নির্বাচনেও আর অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনীতিবিদ ঘোষণা দিয়ে অবসরে যাননি। মুহিতের এই ঘোষণার বাস্তবায়ন হলে তিনিই হবেন প্রথম ব্যক্তি।
কিছু লোক অর্থমন্ত্রীর এ ঘোষণাকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবুল মাল আব্দুল মুহিতের অবসরে যাওয়ার ঘোষণার পেছনে ভিন্ন কারণ রয়েছে।
বিগত ৯ বছরে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। এসব দায় থেকে নিজেকে রক্ষার জন্যই মুহিত আগেবাগে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই ২০১০ সালের ১৯ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে স্মরণকালের ধস নামে। একদিনেই শেয়ারবাজার থেকে লুট হয়ে যায় এক লাখ কোটি টাকা। বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে এসেছে শেয়ারবাজার লুটপাটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জড়িত। শেয়ারবাজার লুট করে সালমান এফ রহমান এখন বিশ্বের সেরা ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় এসেছেন। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত এক রহস্যজনক কারণে শেয়ারবাজার লুটকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। জানা গেছে, শেখ হাসিনার চাপের কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও কোনো উদ্যোগ নেন নি।
তারপর ঘটেছে সোনালী ব্যাংকে অর্থ লুটের ঘটনা। দুর্ণীতি করে হলমার্ক গ্রুপকে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। এনিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন ৪ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না।
এরপর বেসরকারি ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু লুটে নিয়েছেন বিশাল অংকের টাকা। এনিয়ে জাতীয় সংসদেও বাচ্চুর বিচার দাবি করেছেন সংসদ সদস্যরা। বেসিক ব্যাংকের অর্থ লুটের ঘটনায় ৫৬টি মামলা হলেও রহস্যজনক কারণে এসব মামলায় বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। আর অর্থমন্ত্রী মুহিতও এ নিয়ে রহস্যজনক ভুমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে অর্থমন্ত্রী মুহিতের ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর মুহিত আর সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে চাচ্ছিলেন না। শেখ হাসিনার অতিরিক্ত চাপাচাপির কারণে তিনি আবার দায়িত্ব নিয়েছেন।
এরপর ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঘটে ইতিহাসের এক মহা-কেলেংকারি। সেদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হয়ে যায় ৮ হাজার ১০ কোটি ডলার। এ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে ফিলিপাইনকে দোষারোপ করলেও সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন গঠিত তদন্ত কমিটি ও সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকজনই রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত। এমনকি রিজার্ভ চুরির সঙ্গে তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সরাসরি সরকার জড়িত। যার কারণে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার পরও অর্থমন্ত্রী মুহিত তা প্রকাশ করতে গড়িমসি করছেন। একাধিকবার ঘোষণা দিয়ে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেন নি অর্থমন্ত্রী। তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার শঙ্কা রয়েছে বলেও মনে করছেন তারা।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বেচ্চায় অবসরে যাওয়ার ঘোষণা অর্থমন্ত্রী মুহিতের জন্য কোনো কৃতিত্ব বয়ে আনবে না। তিনি যদি শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটের সঙ্গে জড়িতের মুখোশ উম্মোচন করে যেতে পারতেন তাহলে সেটা হতো তার জন্য কৃতিত্বের বিষয়। অবসরে গেলেও অর্থলুটের ঘটনার দায় মুহিত এড়াতে পারবেন না বলেও মনে করছেন তারা।
Discussion about this post