অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাজশাহী মেডেকেল কলেজে কি ঘটেছিলো গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে? বিভিন্ন পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, ডাইনিং টেবিলে আগে খাওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও শিবিরের দুই কর্মীর উত্তপ্ত বাকবিনিময় ও ধাক্কা দেয়া থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এই সংঘর্ষের এক পর্যায়ে গুলি বিনিময়ও হয় দুই পক্ষ থেকে। এই ঘটনায় আহতাবস্থায় দুইজনসহ পুলিশ মোট ৫ শিবিরকর্মীকে আটক করে।
পত্রিকাগুলোতে ডাইনিং খাওয়াকে সংঘর্ষ সূত্রপাত বলা হলেও আসল ঘটনা ছিলো ভিন্ন। সেদিন মূলত জোরপূর্বক র্যাগ ডে’র চাঁদা আদায়ের জের ধরেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে শিবির নেতা-কর্মীদের উপর ছাত্রলীগ হামলা এবং ব্যাপক ভাংচুর চালায়।
জানা যায়, প্রতিবছরই ছাত্রলীগ র্যাগ ডে উপলক্ষে সকল ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদাবাজি করে থাকে। শিবিরের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এবার র্যাগ ডে উপলক্ষে কোনো চাঁদা দেয়া হবে না। শিবিরের এমন সিদ্ধান্তে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিবির সমর্থক ইন্টার্ন ডাক্তারদের সম্মানী থেকে টাকা কেটে রাখবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়। এমন প্রেক্ষিতে ঘটনার একদিন আগে এক শিবিরকর্মী তার ইন্টার্নশীপ সম্মানী তুলতে গেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তার কাছ থেকে জোরপূর্বক র্যাগ ডে’র চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করে।
পরেরদিন বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুন্নবী ছাত্রাবাসে অবস্থানরত শিবির নেতাকর্মীদের কাছে চাঁদা তুলতে যায়। শিবির নেতাকর্মীরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তারা ছাত্রাবাসে ব্যাপক ভাংচুর চালায় ও রুম তালাবদ্ধ করে রাখে।এসময় শিবিরকর্মী হাবিবুর রহমান ও হেলাল উদ্দীন গুরুতর আহত হয়। ছাত্রলীগ কর্মীরা পিংকু হোস্টেলে গিয়েও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তারা হোস্টেলের টিভি, টেবিল ও চেয়ারসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং শিবির সন্দেহে তারা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে। প্রত্যক্ষদর্শিদের মতে, এসময় গুলি ছোঁড়ার ঘটনাও ঘটে।
পরে রাত একটার দিকে পুলিশ এসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নুরুন্নবী হোস্টেলে ব্যপক তল্লাশি চালায়। পুলিশ তালাবদ্ধ রুমের তালা না ভেঙে ছাত্রাবাসের অন্যদিকের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তল্লাশি চালায়। এসময় পুলিশ শিবিরকর্মী ফয়সাল রাহাত, মিজানুর রহমান ও গোলাম রাব্বীকে আটক করে। আহত দুই শিবিরকর্মীকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পরে আটক করে পুলিশ।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত ১টার পর বিভিন্ন হোস্টেলে পুলিশ তল্লাশি চালায়। তল্লাশিকালে ৩ শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয় ও ছাত্রশিবিরের নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতাল থেকে আহত দুই শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এদিকে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হল কর্তৃপক্ষের জরুরি মিটিং আহ্বান করা হয় এবং কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুন্নবী ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
Discussion about this post