শুরুটা হয়েছে বিএনপির সর্বোচ্চ নেতা তারেক রহমানকে দিয়ে। বিএনপি বিদেশী শক্তির অতিরিক্ত নির্ভরতা দেখিয়ে ভেবেছিলো স্যংশনের ভয়ে তারেক রহমানকে সাজা দেবে না। বিএনপি রহমানের রায়ের দিনক্ষণ ঘোষনার শেষ পর্যায়ে আন্দোলন জমাতে চাইলেও সেটা সম্ভব হয়নি।
এরপর তো একের মামলার রায় হয়ে যাচ্ছে। সারাদেশের বিএনপির নেতাদের মধ্যে একটি বড় অংশ এখন কারাদণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছেন। অনেকে কারাদণ্ড পেয়েছেন।
হাসিনা সরকার আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে বিএনপিকে শিকার করছে। গত দুই মাসে অস্বাভাবিকভাবে সাক্ষ্য নিয়ে দিনে রাতে শুনানি করে মামলার রায় দেওয়া হচ্ছে। শুধু আজকেই তিনটি মামলায় বিএনপির ১৩৭ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যেই অন্তত দশ হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন মেয়াদে দন্ডিত হবে।
আজ ২৩ নভেম্বর তিনটি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৩৭ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার পৃথক তিনটি আদালত এই রায় দেন। বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ ১২ জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১০-এর বিচারক মো. মামুনুর রহমান সিদ্দিকী।
দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন, আনোয়ার, হায়দার আলী, বাবলা, ইমরান, সেন্টু ও নাসুম। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এই মামলায় আটজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) আতাউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ৮ মার্চ কোতোয়ালি থানার বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে হরতাল সফল করতে ককটেল বিস্ফোরণ করেন আসামিরা। এতে রিকশাচালক কামাল হোসেন গুরুতর আহত হন। যার মাধ্যমে তাঁরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় উপপরিদর্শক মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ মামলা করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক নাজিম উদ্দীন ২০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বিচার চলাকালীন আদালত আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
লালবাগের মামলায় ৫০ জনের কারাদণ্ড:
রাজধানীর লালবাগ থানার মামলায় পৃথক দুই ধারায় বিএনপির ৫০ জন নেতা-কর্মীর তিন বছর তিন মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায় আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন হাজি আলতাফ হোসেন, মোশারফ হোসেন ওরফে কালা খোকন, জামালুর রহমান চৌধুরী, শফিউদ্দিন আহমেদ সেন্টু, মো. সাইদুল ইসলাম, জিয়ার আলী তাইয়্যন, সাঈদ হোসেন সোহেল ওরফে ক্যাপ সোহেল, হাজি ফয়সাল, আরমান হোসেন বাদল, মো. জুম্মন, ফয়সাল আহম্মেদ, মো. তাজু, মো. রাসেল, রমজান আলী, মো. জিয়া, তাসাদ্দেক হোসেন বাবলু, মো. শাসীম, মুজিবুর রহমান ওরফে মান্জু, পলাশ চৌধুরী, জানে আলম, সজিব আহম্মেদ শিবলু, মো. রুবেল, হাসান উদ্দিন সোহেল, আবু নোমান, খলিলুর রহমান ওরফে রিপন, মো. শহিদুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, মো. চাঁন মিয়া, মাহবুব হোসেন পিচ্চি, কালা বাবু, মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে মাহবুব, মো. সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ মোস্তাফা, মো. সোহেল, আলমগীর কবির সেলিম, সোহাগ হোসেন বিপ্লব, ওহাব মিয়া, ওমর ফারুক, টিটু মিয়া, জাকির আহম্মেদ বাবু, আলমগীর হোসেন, মো. কামাল আকন, হারিছুল হক, তানজিরুল রহমান, মো. ইমরান হোসেন, মো. মামুন সোহেল, মো. আরমান হোসেন, ইমাম হোসেন ইমন, মো. সেলিম ও আকবর আহম্মদ আকবর।
নাশকতার অভিযোগে ২০১৩ সালের নভেম্বরে রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলা করে পুলিশ।
যুবদল নেতা জাহাঙ্গীরসহ ৭৫ জনের কারাদণ্ড
নাশকতার এক মামলায় ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদল সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরসহ বিএনপির ৭৫ নেতা-কর্মীকে দুই বছর ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক এই রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় এস এম জাহাঙ্গীর, শাহাবুদ্দিন সাগর ও শাহ আলমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। অপর ৭২ জন পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত। পলাতক আসামিদের মধ্যে কেউ মারা গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাজা কার্যকর হবে না রায়ে উল্লেখ করেছেন বিচারক।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিদের মধ্যে নাসিম, অপু, আশরাফ, মামুন, আমিনুল, এহসান, রিপন, শাহাদাত হোসেন, আলমগীর, মোখলেচুর, শহীদুল ইসলাম, মাসুদ, খোরশেদ আলী, শফিকুল ইসলাম উল্লেখযোগ্য।
এ ছাড়া এই মামলার রায়ে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় আশরাফ ও মনির হোসেনকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন আদালত।
আসামি পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছয়জন সাক্ষী এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামি জাহাঙ্গীরের নাম কেউ বলেননি। কোনো আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তারপরও সাজা দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে যাঁরা কারাগারে আছে তাঁদের পক্ষে আপিল করা হবে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা অবরোধ চলাকালে আসামিরা রাজধানীর উত্তরার আজমপুর রেলগেটের সামনে অবৈধভাবে জড়ো হয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটান। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কর্তব্য কাজে বাধার সৃষ্টি করে। যানবাহন ভাঙচুর করে। সেখানে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ওই দিনই জাহাঙ্গীরসহ বিএনপির ৭৩ নেতা-কর্মীকে আসামি করে উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করে পুলিশ। ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল জাহাঙ্গীর হোসেনসহ ৭৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
Discussion about this post