বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক সকল সভা-সমাবেশে বাঁধা দিলে মার্কিন ভিসা নীতির যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তাতে করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুলিশ প্রশাসনে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এ নিয়ে এখন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দেখা গেছে, বিগত ১৪ বছরে শেখ হাসিনা তার অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং দেশের প্রধান বিরোধীদলগুলোকে দমনের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে জনগণের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীকে। তারা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী হলেও ১৪ বছর ধরে নিজেদের পেশাদারিত্বকে জ্বলাঞ্জলি দিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী বাহিনীর মতো কাজ করছে। তাদের গায়ে পুলিশের পোশাক থাকলেও মূলত তারা ক্ষমতাসীনদের দলীয় ক্যাডার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন শেখ হাসিনা পুলিশ দিয়েই সম্পন্ন করেছিল। আর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তো নির্বাচনের আগের দিন রাতে এই পুলিশ বাহিনীর লোকজনই সারারাত নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বক্স ভরেছিল। এই নির্বাচনে হাসিনার প্রকৃত ভোটারই ছিল পুলিশ সদস্যরা।
এছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখছে পুলিশ বাহিনীই। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে বিগত কয়েক বছর ধরে পুলিশ নামের এই পেটুয়া বাহিনী বিএনপি-জামায়াতের লোকদের উপর অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে। রাষ্ট্র যে তাদেরকে এদেশের জনগণের নিরাপত্তার জন্য নিয়োগ দিয়েছে সেই কথা তারা ভুলেই গেছে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো তারাও ভাবছে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে কেউ নামাতে পারবে না। কিন্তু গত বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পরই তাদের চেতনা ফিরে এসেছে। শুধু চেতনা ফিরছে না, তাদের মধ্যে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের বহু কর্মকর্তার ছেলে-মেয়ে আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া পড়ালেখা করে। অন্য চারটি দেশও আমেরিকাকে অনুসরণ করে। আমেরিকা কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা তারা অঘোষিতভাবে বাস্তবায়ন করে।
পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, আগামী দিনগুলোতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিরোধীদল যদি সরকার পতনের আন্দোলনে নামে তাহলে তাদেরকে ঠেকাতে সরকারের একমাত্র হাতিয়ার হল পুলিশ। এখন তারা যদি বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে মাঠে নামে তাহলে তারাও আমেরিকার ভিসা পাবেন এবং যাদের ভিসা আছে তাদেরটাও বাতিল হবে। এমনকি যারা বাধাদান করবে তাদের সন্তান বা পরিবারের কেউ যদি আমেরিকায় বসবাস করে থাকে তাহলে তাদের ভিসাও বাতিল হবে। এনিয়ে তারা এখন উভয় সংকটে পড়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে ভিসা হারাবে আর সরকারের নির্দেশ না মানলে চাকরি হারাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ ও সচেতন মানুষেরা মনে করছেন, বিরোধীদল দমনে সরকার এখন আর আগের মতো বিরোধীদলকে ব্যবহার করতে পারবে না। শেখ হাসিনার অবৈধ নির্দেশ পুলিশ কর্মকর্তারা এখন আর পালন করবে না। সরকার যদি তাদেরকে বাধ্য করে তাহলে পুলিশের মধ্যে বড় ধরণের বিভক্তি দেখা দিতে পারে। আর পুলিশের ভেতর যদি বিভক্তি দেখা দেয়, তাহলে শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়বে এবং সরকারের জন্য বড় ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হবে।
Discussion about this post