অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দুর্নীতি, লুটপাট আর রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ বিদেশে পাচার করে এখন চতুরমুখি সংকটের মুখে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঋণ এনে রিজার্ভ কিছুটা বাড়ানোর জন্য আন্তর্তিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর কাছে কয়েক মাস ধরে ধরণা দিচ্ছে শেখ হাসিনার মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা। ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য গত সপ্তাহে ঢাকায় এসেছে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল। তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সব আর্থিক সেক্টরের সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
জানা গেছে, আইএমএফ তাদের নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরসহ আরো কয়েকটি অর্থনৈতিক সেক্টরে ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। আইএমএফের মতে, এসব সেক্টরে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। তাই তাদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হলে অবশ্যই এসব সংস্কার প্রস্তাব মানতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪.৫ বিলিয়ন ঋণের জন্য আইএমএফকে বাংলাদেশে ডেকে এনে চরম বেকায়দায় পড়েছে সরকার। আইএমএফের সংস্কার প্রস্তাব সরকার মানতেও পারছে না, আবার ঋণও খুব দরকার। ঋণ নিতে হলে সংস্কার প্রস্তাব মানতে হবে। আর সংস্কার প্রস্তাব মানলে সরকারের সব কুকীর্তি বেরিয়ে আসবে।
জানা গেছে, আইএমএফের প্রথম প্রস্তাব হল-ব্যাংকগুলোর এত খেলাপি ঋণ কেন হল? টাকাগুলো উদ্ধার করতে পারছে না কেন? এসব ঋণ কাদেরকে দেয়া হয়েছে? তারা টাকা ফেরত দিচ্ছে না কেন? খেলাপিদের নামসহ বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
জানা গেছে, আইএমএফের এই প্রস্তাব মানতে রাজি হচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, এই প্রস্তাব মানলে-শেখ হাসিনার যেসব লোক ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে তাদের নাম বেরিয়ে আসবে। আর আইএমএফ এই প্রস্তাব দেয়ার কারণেই ঋণ না নেয়ার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে ব্যবসায়ী নেতারা। কারণ, খেলাপিদের নাম প্রকাশ করলেই তারা ধরা পড়বে। এজন্য তারা শর্ত মেনে ঋণ না নেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
তারপর, সরকার দীর্ঘদিন ধরে রিজার্ভের হিসাব নয়-ছয় করে দেখাচ্ছে। দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করার জন্য সরকার প্রকৃত রিজার্ভ থেকে ১০ বিলিয়ন বেশি দেখাচ্ছে। যেটা আইএমএফ মেনে নিচ্ছে না। আইএমএফের নীতিমালা অনুযায়ী, ইডিএফ ও জিটিএফ ফান্ডের টাকা হিসাবে আসবে না। এগুলো ব্যবহার যোগ্য না। সংকটের সময় সরকার চাইলেও এগুলো পাবে না। তাই যেটা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করা যায় সেটাই হবে প্রকৃত রিজার্ভ। এখন সরকার যদি আইএমএফের হিসাব মেনে নেয় তাহলে রিজার্ভ দাড়াবে ২২ বিলিয়ন ডলারে। যেটা দ্বারা তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। সরকারের ধারণা, এই মেসেজ জনগণের কাছে গেলে বড় ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হবে। মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। পরিস্থিতি যেকোনো সময় শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে।
তারপর, বিদ্যুৎ নিয়েও চেপে ধরেছে আইএমএফ। কুয়েক রেন্টালকে কেন বসিয়ে বসিয়ে ভুর্তকি দেয়া হচ্ছে সেটাও জানতে চেয়েছে আইএমএফ। আর একথা সবারই জানা যে, বিগত ১৩ বছরে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে জয় সবচেয়ে বেশি লুটপাট করেছে বিদ্যুৎ খাত থেকে। বিদ্যুৎখাতের এই করুণ পরিস্থিতি নিয়ে এখন আইএমএফের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে সরকার।
অনুসন্ধান বলছে, সরকার এখন আইএমএফ থেকে ঋণ না নেয়ার পথ খুঁজছে। কিভাবে আইএমএফ দলকে বিদায় করা যায় সেই রাস্তা বের করছে। এটাও জানা গেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঋণ নেয়ার পক্ষে। কিন্তু কিছু মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী নেতারা শর্ত মেনে ঋণ না নেয়ার পক্ষে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু বিদ্যুৎ খাতে ৭০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ পেতে, যে টাকা দিয়ে প্রায় সাতটা পাওয়ার স্টেশন করা যেত। কার পেটে এই টাকা গেছে? জবাব দিতে হবে। বিদ্যুৎ মন্ত্রী জবাব দিতে হবে জনগণের কাছে। চুরি চুরি মহাচুরির রাজত্ব কায়েম করছে চারদিকে। মুক্তিযুদ্ধের অর্জন চুরির মাধ্যমে বিসর্জন দিচ্ছে দুর্নীতিবাজ সরকার।’
Discussion about this post