ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজী, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ ইত্যাদি অপকর্ম চালিয়ে আসছে বছরের পর বছর। দেশের মেধাবী ছাত্ররা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। হলে থাকার সুযোগ নিতে তাদের একটি অংশ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীতে পরিণত হচ্ছে। দেশের যুব সমাজকে ছাত্রলীগ নিয়মিতভাবেই সন্ত্রাসী বানিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের শেল্টার দিচ্ছে।
এর মধ্যে কেউ সন্ত্রাসী করতে গিয়ে যখন বাড়াবাড়ি করে ফেলে অথবা তাদের অপকর্ম ভাইরাল হয়ে যায় তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঐ সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার করে। এটা পুরোটাই ভাঁওতাবাজী। আসলে সন্ত্রাসীদেরকে দৃষ্টির বাইরে নিতে ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের দায় এড়াতে এই বহিষ্কারের নাটক করে। কিছুদিন পরে বহিষ্কৃতরা সমান তালে আবারো ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়ায়।
রামদাতে শাণ দেওয়ার যে ছবিটা দেখা যাচ্ছে সেটা ২০১৫ সালের ২ নভেম্বরের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তখন মুখর ছিল ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের পদচারণে। তাঁদের শুভেচ্ছাও জানাতে ব্যস্ত ছিলেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আর এ শুভেচ্ছা জানানোকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বীর পক্ষের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষের সময় তোলা এই ছবি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। ছবিতে শাহজালাল হলের তৃতীয় তলার বারান্দায় রামদায় শাণ দিতে দেখা যায় দুই কর্মীকে।
ওই দুই ছাত্রলীগ কর্মীর একজন ছিলেন মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসাইন। তিনি ক্যাম্পাসে টাইগার মোফা নামে পরিচিত। আরেকজন ছিলেন মিজানুর রহমান খান। তিনি শ্রাবণ মিজান নামে পরিচিত। তাঁরা দুজনই গত কিছুদিন আগে গঠিত হওয়া চবি ছাত্রলীগের কমিটিতে সহসভাপতির পদ পেয়েছেন।
শাণ দেওয়ার ছবিটি মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তিন দিন পর দুজনকেই সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের পর পরীক্ষা দিতে না পেরে এর পরের বছরের ৫ এপ্রিল চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরীক্ষার হলে তালা ঝুলিয়ে দেন মোফাজ্জল হায়দার। এ কারণে ওই দিনের পরীক্ষা স্থগিত রাখতে হয়েছিল। এরপর যথারীতি তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার হয়।
চবি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষে আছেন সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীরা। আরেকটি পক্ষে আছেন সাবেক সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা। মূলত নওফেল ও নাছির চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী তৈরি করছে ও তাদের পেলে পুষে বড় করছে।
এমন ঘটনা প্রতিটি বহিষ্কারের ঘটনায় ঘটেছে। বুয়েটে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় আজীবন বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আশিকুল ইসলাম বিটু কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অনলাইন ক্লাসে যোগদান করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
Discussion about this post