অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে দ্বন্দ বেশ পুরানো। এ নিয়ে ক্যাম্পাস উত্তাপ্ত হয়েছেও বেশ কয়েকবার। তার ধারাবাহিকতায় এবারও ক্যাম্পাস জুড়ে সুষ্টি করেছে নৈরাজ্য। পূর্ণাঙ্গ কমিটি পুনর্গঠনের দাবির নামে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেয় পদ পঞ্চিত ছাত্রলীগের একাংশের নেতা–কর্মীরা। ফলে ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা হয়ে পড়ে। চারটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। অপহারণ করা হয় শাটলচালককে। সবশেষে পুনারায় কমিটি দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে অবরোধ স্থগিত করে তারা। তবে সমালোচনা যেন পিছুই ছাড়ছে না।
গত রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দফতর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ৬৯জন সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন। এদের মধ্যে আলোচনায় এসেছেন মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসাইন এবং মিজানুর রহমান খান।
চবি ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন তৎকালীন সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বীর পক্ষের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের তৃতীয় তলার বারান্দায় রামদায় শাণ দিতে দেখা যায় তখনকার ছাত্রলীগের কর্মী মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসাইন এবং মিজানুর রহমান খানকে। এই ঘটনায় যেখানে তাদের শাস্তি হওয়ার কথা সেখানে ২০২২ সালে এসে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাদের পুরস্কৃত করেছে সহ-সভাপতির পদ দিয়ে।
ছাত্রলীগ কর্মী মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসাইন। তিনি ক্যাম্পাসে টাইগার মোফা নামে পরিচিত। আরেকজন ছিলেন মিজানুর রহমান খান। তিনি শ্রাবণ মিজান নামে পরিচিত। শ্রাবণ মিজান ও টাইগার মোফা—দুজনই শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ ‘সিক্সটি নাইন’–এর কর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ছবি প্রকাশ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন দিন পর দুজনকেই সাময়িক বহিষ্কার করে। বহিষ্কারের পর পরীক্ষা দিতে না পেরে ২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরীক্ষার হলে তালা ঝুলিয়ে দেন মোফাজ্জল হায়দার। এ কারণে ওই দিনের পরীক্ষা স্থগিত রাখতে হয়েছিল।
নতুন কমিটির সহসভাপতি করা হয়েছে ভার্সিটি এক্সপ্রেসের ছাত্রলীগ নেতা প্রদীপ চক্রবর্তীকে। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে খুনের মামলা। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে চবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র তাপস সরকার নিহত হন। গত বছরের ২১ অক্টোবর ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় চবি ছাত্রলীগের প্রধান দুটি গ্রুপ সিক্সটি নাইন ও সিএফসি। এই সংঘর্ষের ঘটনায় দুই গ্রুপের ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিস্কার করা হয়। বহিস্কৃতদের মধ্যে সিক্সটি নাইনের ছয়জন এবং সিএফসির ছয়জন কর্মী রয়েছেন। কমিটিতে তাঁদের বেশিরভাগই পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পদ।
ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের জুনায়েদ হোসেন বহিস্কার হয়েছেন দুইবার। তিনি পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদকের পদ। এক বছরের জন্য বহিস্কৃত মির্জা কবির সাদাফের শেষ হয়নি বহিস্কারের সময়ও। তিনি পেয়েছেন সহসভাপতির পদ। আরেক বহিস্কৃত আরিফুল ইসলাম আছেন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে। বহিস্কৃত শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদও পেয়েছেন সহসম্পাদকের পদ। ছয় মাসের জন্য বহিস্কৃত আকিব জাভেদ পেয়েছেন উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকের পদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক বিজয় গ্রুপের নেতা মো. ইলিয়াস নতুন কমিটিতে পেয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ করেছেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।
কমিটিতে স্থান পেয়েছেন হল দখল ও মারামারিতে যুক্ত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের অন্যতম ১১ নেতাও। তাঁদের মধ্যে আছেন সভাপতি রেজাউল হক রুবেল, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল হাসান দিনার, সংগঠনের সাবেক সহসভাপতি নাছির উদ্দিন সুমন, সাবেক সদস্য সাইদুল ইসলাম, বাংলার মুখের নেতা ও সাবেক পাঠাগার সম্পাদক আবু বকর, শামসুজ্জামান সম্রাট প্রমুখ।
চবি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষে আছেন সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারীরা। আরেকটি পক্ষে আছেন সাবেক সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা।
Discussion about this post