বারবার ব্যায় বাড়িয়ে তিনগুণ বেশি খরচে তৈরি করা পদ্মাসেতু শেখ হাসিনার নামে নামকরণের জন্য প্রস্তাব করেছেন আওয়ামী সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জনগণের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছে পদ্মাসেতু। এখন নামকরণ হবে শেখ হাসিনার নামে। টাকার মাসুল গুনতে হবে জনগণকে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুর নাম সারা জাতিই চায়, শেখ হাসিনার নামে হোক। শেখ হাসিনার সাহসের সোনালি ফসলের নাম পদ্মা সেতু। জুনেই পদ্মা সেতু চালু করা হবে বলে তিনি জানান। কিন্তু সারা জাতি চায় তিনি বুঝলেন কেমন করে? তিনি কি জাতির পক্ষ থেকে এবিষয়ে কথা বলার ইজারা নিয়েছেন? এমন প্রশ্নও করছেন অনেকে। ম্যান্ডেটহীন সরকারের মন্ত্রী জাতির দোহাই দিয়ে আগামী কাউন্সিল সামনে রেখে তাঁর নেত্রীকে খুশি রাখতে চাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, দফায় দফায় সেতুর নির্মাণ ব্যায় বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত টোল দিতে হবে প্রতিটি গাড়িকে। এই খরচ ঘুরে-ফিরে জনগণের কাঁধেই চাপছে। অথচ, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাহবা দিচ্ছেন তাঁর নেত্রী নিচ্ছেন শেখ হাসিনাকে।
পদ্মা সেতুতে টোল নির্ধারণের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে থেকে যে টোল হারের প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেটাই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
যখন ওই প্রস্তাব করা হয়, তখন এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। অনেকেই ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। অনেকে যমুনা সেতুর সঙ্গে টোলের হারের পার্থক্য তুলে ধরেন।
শরীয়তপুরের বাসিন্দা মনির হোসেন বলছেন, ”নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে। সেখানে টোলের হার কেন এতো বেশি হবে? বরাবর দেখা যায়, ব্রিজ হলে ফেরিতে যে টোল থাকে, ব্রিজেও সেটাই ঠিক করা হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুতে শুরুতেই এতো বেশি টোল ধরা হচ্ছে কেন?”
২০০৭ সালে একনেকের বৈঠকে সেতুর ব্যায় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার টাকা ১৬২ কোটি টাকা। কিন্তু দফায় দফায় নির্মাণ ব্যায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। ২০০৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল পদ্মাসেতু চালু হবে ২০১৩ সালে। নির্মাণ ব্যায় বাড়ার সাথে সাথে নির্মাণ কাজ শেষ করতেও অনেক অতিরিক্ত সময় নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ মে) এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে আগামী জুন মাসের শেষের দিকে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তবে সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনকে ফেরির চেয়ে দেড়গুণ বেশি টোল দিতে হবে। এ সেতু দিয়ে চলাচল করতে যানবাহন ভেদে টোল ঠিক করা হয়েছে সর্বনিম্ন ১শ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকার বেশি। ফেরি পার হতে যে টাকা খরচ হয়, তার চেয়ে দেড়গুণ বেশি টাকা গুণতে হবে সেতু পার হতে।
মঙ্গলবার সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের উপ-সচিব আবুল হাসানের সই করা প্রজ্ঞাপনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে মোটরসাইকেলকে দিতে হবে ১০০ টাকা। প্রাইভেটকার ও জিপে ৭৫০, পিকআপে ১ হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১ হাজার ৩০০ টাকা।
এছাড়া ৩১ আসন বা এর কম আসনের ছোট বাসের জন্য দিতে হবে ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে দুই হাজার টাকা, বড় বাসে দুই হাজার ৪০০ টাকা। ৫ টনের ট্রাক এ সেতু পাড়ি দিলে গুনতে হবে ১ হাজার ৬০০ টাকা। পাঁচ টন থেকে আট টনের মাঝারি ট্রাকের জন্য দিতে হবে ২ হাজার ১০০ টাকা, আট টন থেকে ১১ টনের মাঝারি ট্রাকের টোল দিতে হবে ২ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া থ্রি-এক্সেলের ট্রাকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা, মালবাহী ট্রেইলারের (চার এক্সেল) ছয় হাজার টাকা এবং চার এক্সেলের ওপরে মালবাহী ট্রেইলারের জন্য প্রতি এক্সেলে দেড় হাজার টাকা যোগ হবে।
দেড় গুণ বাড়তির এই টোলের প্রভাব পড়বে জনগণের ঘাড়ে। টোলের অজুহাতে বাস ভাড়া যেমন বেশি নেওয়া হবে, তেমনি পণ্যপরিবহন খরচও বাড়বে। এতে বাড়বে পণ্যের দাম।
Discussion about this post