অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দুর্নীতি, লুটপাট আর দু:শাসনের পর জনগণের প্রতিরোধের মুখে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে কে। তবে রাজাপাকসের বিদায়টা কোনো সাধারণ বিদায় ছিল না। শ্রীলঙ্কার মানুষ যে ক্ষমতাসীনদের উপর কতটুকু ক্ষেপা ছিল এটা বোঝা গেল রাজাপাকসের বিদায়ের সময়। নির্যাতিত আর নিপীড়নের শিকার মানুষগুলো জেগে উঠলে যে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেটা বিশ্ববাসী দেখেছে শ্রীলঙ্কায়।
এখন প্রশ্ন হল-বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কিভাবে শাসন করছে? দেশের মানুষ কেমন আছে? কি পরিমাণ দু:খ-কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে দেশের মানুষকে? তারা যদি কোনো দিন জেগে উঠে তাহলে শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাকর্মীদের অবস্থা কেমন হতে পারে?
অনেকেই হাসিনার সাথে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের তুলনা করছেন। তবে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, তেমনটি হওয়ার সুযোগ নাই। রাজাপাকসের ক্ষমতার দাম্ভিকতা ছাড়িয়ে গিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে ধারণা তাদের।
তারা বলছেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবার, দলের নেতাকর্মী, দলীয় আমলারা যে বিগত ১২ বছরের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে সেটা এখন ওপেন সিক্রেট। এক কথায় বললে-বিগত ১২ বছরে শেখ হাসিনা লুটপাটের করে দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড একেবারে ভেঙ্গে দিয়েছে। বিশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ও শেয়ারবাজা লুটের সাথে হাসিনার পরিবার জড়িত।
এরপর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে শেখ হাসিনা সীমাহীন রাজনৈতিক নিপীড়ন চালিয়েছে। দেশে বিরোধীদলগুলোকে প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচী করতে দিচ্ছে না। দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। শুধু তাই নয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনও পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ দিয়ে দমন করেছে।
শেখ হাসিনার সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ হল-গুম, খুন ও অপহরণ। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীকে গুম ও অপহরণ করেছে। বিশেষ করে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাজিদ, জামায়াতের দুই নেতার ছেলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমান আযমী ও ব্যারিস্টার আরমান, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের দুই নেতা অলিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দেসহ বহুন নেতাকর্মীকে শেখ হাসিনা গুম করেছে।
শেখ হাসিনার নির্দেশে কথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে র্যাব, পুলিশ ও ডিবি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীসহ কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এরপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ ও শ্রমীক লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার-নির্যাতন, চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমিদখন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিতে সাধারণ মানুষের প্রাণ এখন উষ্ঠাগত। এক কথায় বললে-মানুষের ধৈর্য্যরে বাধ ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে মানুষ মুখ খুলতে পারছে না। শুধু নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে।
এছাড়া উন্নয়নের নামে সাধারন মানুষের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে। একাধিকবার বাড়িয়েছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম। দ্রব্যমূল্যেরেউর্ধগতিতো চলছেই। যার কারণে সাধারন মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। তারা বলছেন, শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার আর সুযোগ নেই। পুলিশ বাহীনির মধ্যেও এখন ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই সাধারণ মানুষ গণ আন্দোলন তুলবে। যে আন্দোলনে ক্ষমতাসীন দলের পরিনতি সুনিশ্চত। তারা বলছেন, হাসিনা সরকারকে যদি ক্ষমতা ছাড়া করা সম্তাভব হয় তাহলে শ্রীলঙ্কার চেয়েও তাদের অবস্থা আরও বেশি ভয়ানক হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে যে একটার পর একটা প্রকল্প নিয়ে চলছে এর কোনোটারই সঠিক ইকোনমিক ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়নি। এই ধরনের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের করার কথা হচ্ছে, দ্বিতীয় আরেকটি পদ্মা সেতু করার কথা হচ্ছে, দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা বলা হচ্ছে, ঢাকাকে অন্য জায়গায় সরিয়ে ফেলার কথা বলা হচ্ছে, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বুলেট ট্রেন চালু করার কথা বলা হচ্ছে। এগুলো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, যা আসলে সামষ্টিক চিন্তা থেকে নেওয়া হয়নি। সবই হবে ঋণের টাকায়। সরকারের ঋণের কিস্তি ২০২৫ সালের মধ্যেই ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এটাতো গেল বৈদেশিক ঋণ। এর সঙ্গে বিশাল অভ্যন্তরীণ ঋণ আছে। সেটা যোগ করলে বাংলাদেশের ঋণ ও জিডিপির অনুপাত ৫০ শতাংশের উপরে চলে যাবে। এটা খুবই বিপজ্জনক একটা অবস্থা। কাজেই দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ এবং উল্টোপাল্টা প্রকল্প গ্রহণের ব্যাপারে যদি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ না করতে পারি তাহলে বছর চার-পাঁচেকের মধ্যে আমরাও শ্রীলঙ্কার পর্যায়ে চলে যাব।
Discussion about this post