অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিপদ যেন একেবারেই পিছু ছাড়ছে না শেখ হাসিনাকে। গুম-খুন ও অপহরণের দায়ে র্যাবের উপর নিষেধাঞ্জার পর থেকে চরম অস্তস্তিতে দিন কাটছে শেখ হাসিনার। অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখাই এখন শেখ হাসিনার সামনে বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।
এরপর শেখ হাসিনার দাদার দেশ হিসেবে পরিচিত ভারত কয়েক বছর ধরেই শেখ হাসিনা ও তার দলের উপর প্রচণ্ড ক্ষেপা। চায়নার সখ্যতা বাড়ানোর কারণে ভারত যে আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না সেটা শেখ হাসিনা ভাল করেই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু এসব ঝামেলার মধ্যেই জাপানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া এক ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। নিকেই এশিয়ার সংবাদে ভারত শুধু উদ্বিগ্ন নয়, শেখ হাসিনার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
‘নিক্কেই এশিয়া’র ওই খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিমান বিধ্বংসী মিসাইল (সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল) রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রস্তুত করছে চীন। কিন্তু দেশের কোথায়, কবে থেকে চীনের মিসাইল মেনটেনেন্স ফ্যাসিলিটি সেট আপের উদ্যোগ? সে সম্পর্কে প্রতিবেদনে কোনো কিছু বলা হয়নি।
ঢাকা বা বেইজিং কোনো পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে মিসাইল রক্ষণাবেক্ষণাগার প্রতিষ্ঠার কথা স্বীকার না করলেও ‘নিক্কেই এশিয়া’র কন্ট্রিবিউটিং রাইটার নীতা লালের লেখা ওই প্রতিবেদনে এ নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়টি সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনের দাবি- এ নিয়ে নয়াদিল্লি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তাদের উদ্বেগের বড় জায়গা হচ্ছে- বাংলাদেশের মতো ভারতের পুরনো মিত্রদের সঙ্গে খাতির তথা প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করে চীন ওই সব দেশের সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলছে। নীতা লাল লিখেন- ২০১১ সালে বাংলাদেশকে যে সারফেস টু এয়ার মিসাইল দিয়েছে, তা রক্ষণাবেক্ষণে চীন এমন ব্যবস্থা তৈরি করছে যাকে ‘হাব’ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
আর এতেই নয়াদিল্লিতে অ্যালার্ম বেল বা বিপদ ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। ‘রক্ষণাবেক্ষণ হাব’ প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যেকার চুক্তি নিয়ে বেইজিং বা ঢাকা কেউই এখনো মুখ খুলেননি। অর্থাৎ এ বিষয়ে অদ্যাবধি আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে ঢাকার এক সিনিয়র কূটনীতিক নিক্কেই এশিয়াকে এটা নিশ্চিত করেছেন যে, এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশেষভাবে ডিজাইন করা এবং ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী সারফেস টু এয়ার মিসাইল (স্যাম) যা গ্রাউন্ড টু এয়ার মিসাইল জিটিএএম বা সারফেস টু এয়ার গাইডেড উইপন (স্যাগউ) নামে পরিচিত। এই মিসাইলকে আধুনিক যুগের বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা হয়।
রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশকে প্রদেয় সুবিধায় চীনা কোম্পানি ভ্যানগার্ড অংশীদার, এটি চীনের মিলিটারি রিলেটেড বিনিয়োগ এবং সরবরাহের অংশ। যার মধ্যে রয়েছে যুদ্ধজাহাজ, নৌ-বন্দুক, জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম। সুইডেন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান মতে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চীনের সামরিক রপ্তানির ১৭ ভাগ গেছে বাংলাদেশে। যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র গ্রাহকে পরিণত হয়েছে। অবশ্য বরাবরের মতো পাকিস্তান চীনের প্রধানতম অস্ত্র রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে রয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, যদিও বাংলাদেশ নিজেকে ভারতের ‘ঘনিষ্ঠ মিত্র’ বলে মনে করে, তবে তারা চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, জাপানি গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার ও চীনের মধ্যে গোপন চুক্তির সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই সরকারের নীতিনির্ধারকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ভারতের পক্ষ থেকে তারা বড় ধরণের বিপদের আশঙ্কা করছে। আর সেটা হতে পারে আ.লীগকে খুব শিগগিরই ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া।
Discussion about this post