অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কুটচাল-কুটকৌশল ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আগামীতেও ক্ষমতা ধরে রাখার স্বপ্ন দেখছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে সব হিসাব নিকাশ পাল্টে যাচ্ছে। চলমান ক্ষমতার বাকী দিনগুলো কিভাবে টিকে থাকা যায় শেখ হাসিনা এখন সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে র্যাব। এছাড়া পুলিশের বর্তমান আইজি বেনজির, র্যাবের ডিজি আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ৭ কর্মকর্তা। এছাড়া সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমদের মার্কিন ভিসাও বাতিল করা হয়েছে।
বিগত ১২ বছর ধরে গুম, খুন, অপহরণ ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীদেরকে নির্বিচারে হত্যার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকতে যারা সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে তাদের মধ্যে জেনারেল আজিজ ও বেনজির আহমদ ছিল অন্যতম।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের সময় আজিজ ছিল বিজিবির মহাপরিচালক। ওই নির্বাচনের আগে পরে বিরোধীদলকে দমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে বিজিবি। এমনকি বিজিবির কারণেই শেখ হাসিনা একতরফাভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। পরবর্তীতে আজিজ আহমদকে পুরস্কার হিসেবে সেনা প্রধান করেন শেখ হাসিনা। আজিজ আহমদও কৃতজ্ঞতা হিসেবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আগাম ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করেছেন। যার কারণে আজিজের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠার পরও শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
তারপর বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজির আহমদ হল দেশের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। শেখ হাসিনা শুধু নামে প্রধানমন্ত্রী। দেশ চালাচ্ছে মূলত বেনজিররাই। ডিএমপি কমিশনার ছিল বেনজির। ডিএমপিতে থাকাকালীন বেনজির অক্ষরে অক্ষরে হাসিনার নির্দেশ পালন করে বিএনপি-জামায়াতকে সাইজ করেছিল। এরপর বেনজিরকে র্যাবের মহাপরিচালক করে শেখ হাসিনা। বেনজির র্যাবের মহাপরিচালক হওয়ার পরই সারাদেশে ব্যাপক হারে বেড়ে যায় কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার। বিএনপি-জামায়াতের উদীয়মান নেতাকর্মীদেরকে বাসা-বাড়ি থেকে ধরে এনে বন্দুকযুদ্ধের নামে রাতের অন্ধকারে গুলি করে হত্যা করেছে। এছাড়া শত শত মানুষকে গুম ও অপহরণ করেছে নিখোজ করেছে। সেই বেনজিরকে পরবর্তীতে করা হয়েছে পুলিশের মহাপরিদর্শক।
এদিকে পুলিশ প্রধান হওয়ার পর থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে বেনজির। বেনজির এখন নিজেকে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলে মনে করেন। তার কথাবার্তা, আচার আচরণ ও হাবভাবে মনে হয় না যে তিনি রাষ্ট্রের কর্মচারী। বিশ্লেষকরা বলছেন, কথায় আছে-পাপ নাকি বাপকেও ছাড়ে না। বেনজিরের পাপ দিন দিন বাড়ছিল। শেষ মেষ ধরাটা খাইল আমেরিকার হাতে। গুম-খুন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা বাতিল করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে চরম বিপাকে পড়ে গেছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাল্টে যাচ্ছে তার সকল হিসাব-নিকাশ। কারণ, যাদের উপর ভর করে তিনি ক্ষমতায় টিকে আছেন এবং আগামীতেও ক্ষমতা দখলের কৌশল করছেন-সেই লোকগুলোই আন্তর্জাতিকভাবে ধরা খেয়ে গেল। র্যাব-পুলিশকে দিয়ে এখন শেখ হাসিনা চাইলেও আর আগের মতো যা খুশি তা করতে পারবেন না।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে র্যাব নিষিদ্ধ হওয়ার পর পুলিশেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ, গুম-খুনের সাথে পুলিশও জড়িত। সরকারের নির্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশ এখন আর নিষিদ্ধের তালিকায় পড়তে চাচ্ছে না। যেসব কর্মকর্তা গুম-খুনের সাথে জড়িত তাদের এখন অন্যরা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। এসব কারণে শেখ হাসিনা এখন চরম অস্বস্তিতে আছেন। আগের মতো আগামী নির্বাচনে আর র্যাব-পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখলে পাশে পাবেন না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
Discussion about this post