ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত খ ইউনিটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া মো. জাকারিয়াকে নিজেদের ছাত্র দাবি করে জোর করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল আইকন প্লাস নামের একটি ভর্তি কোচিং সেন্টার। তাতে রাজি না হওয়ায় ওই কোচিং সেন্টারের লোকজনের হাতে হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন জাকারিয়া।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের বিটিআই ভবনে নিজের কোচিং ফোকাসের কার্যালয়ে গেলে এ ঘটনা বলে অভিযোগ জাকারিয়ার। আজ দুপুরে প্রকাশিত খ ইউনিটের ফলাফলে মোট ১২০ নম্বরের মধ্যে ১০০ দশমিক ৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন ঢাকার দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্র জাকারিয়া।
জাকারিয়া এক ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি জানিয়েছেন। পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ফোকাসে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কোচিং করেছি। খ ইউনিটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর ফোকাস কোচিংয়ের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক সংবর্ধনা ও লাইভ অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া জানাতে আমি বিকেলে ফোকাসের ফার্মগেট কার্যালয়ে যাই। লাইভ অনুষ্ঠানটি শুরু হওয়ার ঠিক আগেই কিছু লোক জোর করে ওই কার্যালয়ে ঢুকে আমাকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁরা আমাকে এই বলে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করেন যে আমি আইকন প্লাসে কোচিং করেছি। এতে আমি অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা আমাকে হুমকি-ধমকি ও থাপ্পড় দিয়ে চলে যান।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইকন প্লাস কোচিং সেন্টারের পরিচালক কামাল হোসেন অবশ্য জাকারিয়াকে হুমকি-ধমকি ও হেনস্তার বিষয়টি অস্বীকার করলেও সেসময় ফোকাস কোচিং এ যাওয়ার কতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে সেখানে ছিলাম। বিটিআই ভবনের ছয়তলায় আমাদের কার্যালয় আর দোতলায় ফোকাসের। বিকেলে আমরা যখন কার্যালয় থেকে নামছিলাম, তখন ফোকাস কার্যালয়ে অনেক মানুষের ভিড় দেখতে পাই। ওই কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে দেখি, সেখানে কোনো একটি সভা চলছে এবং স্থানীয় কিছু ব্যক্তি হইহুল্লোড় করছে।
দুপুরে খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই এক ফেসবুক পোস্টে আইকন প্লাস কোচিং সেন্টারের যাত্রাবাড়ী শাখার পরিচালক মোহাম্মদ লিমন দাবি করেন, প্রথম হওয়া জাকারিয়া তাঁদের কোচিংয়ের ছাত্র। কিছুক্ষণ পর ওই পোস্টটি শেয়ার করে জাকারিয়া লেখেন, ‘আমি একটা ফ্রি ক্লাস করছিলাম (আইকন প্লাসে)। তখন তারা পরীক্ষা নিয়েছিল। সেখানে আমি প্রথম হয়েছিলাম। ফ্রি ক্লাস করলেই যে কোচিংয়ের ছাত্র হয়, এটা জানতাম না।’
এ বিষয়ে ফোকাস ফার্মগেট শাখার এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের ভর্তি কোচিংয়ের শিক্ষার্থী জাকারিয়াকে আমরা সংবর্ধনা দেয়ার জন্য ফার্মগেট শাখায় এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎই অন্য কোচিংয়ের একদল লোক আমাদের শাখায় এসে সংবর্ধনা দিতে বাধা দেয়। ওই সময় তারা জাকারিয়াকে ছিনিয়ে তাদের সঙ্গে করে নিয়েও যেতে চায়।
পরে জাকারিয়া যেতে না চাইলে ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়। ঘটনার বিবরণ দিলেও ওই কোচিংয়ের নাম বলতে চাননি ফোকাসের এই পরিচালক।
তবে জাকারিয়ার বন্ধু রাফিদ হাসান সাফওয়ান জানান, ‘আইকন প্লাস’ কোচিং সেন্টার থেকে লোক এসে তার বন্ধুকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। সাফওয়ান বলেন, আমার বন্ধু জাকারিয়ার সঙ্গে আমর কথা হয়েছে। তাকে আইকনের লোকেরাই তুলে নেয়ার চেষ্টা করে।
এই ঘটনা নিয়ে জাকারিয়া একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন। পাঠকদের জন্য জাকারিয়ার সেই স্টাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল:
“ফোকাস ফার্মগেট শাখায় আছি। লাইভের সময় হঠাৎ বাইরে হুড়োহুড়ি। কিছুক্ষণ পরে কিছু লোকজন ঢুকল। ঢুকেই বলল এই তোরা কি মিটিং করোছ নাকি। এসেই ফোকাসের ভাইদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করল।আমারেও বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু যাইনি। এক পর্যায়ে টানাটানি। তাতেও না নড়ায় এক কালো পান্ডা মাথায় থাপ্পড় দিল। শেষ পযার্য়ে ফোকাসের ভাইদের বাইরে পাঠিয়ে দিল। এক পর্যায়ে দেখলাম এক কোচিং এর কিছু টিচার। আসছিল জোর জবরদস্তি করে বলাবে জাকারিয়া আমাদের কোচিং এর।
আমার যদি কিছু হয় তাহলে তারা দায়ী। এখন ফার্মগেটই আছি। টিচাররূপী কিছু কুলাঙ্গারও চলে গেল। মওদুদ ভাইয়া এবং আলামিন ভাইয়ারাও সব জানে। কোচিং এর নাম বললাম না। ক্ষমা করে দিব বলছি। তাই ক্ষমা করে দিলাম। আশা করি আর জীবনেও এমন কাজ করবেন না। এবং টিচাররূপী কুলাঙ্গারগুলোও মানুষ হবেন। আমি ফোকাসেই কোচিং করেছি। অন্য কোথাও কোচিং করিনি।”
Discussion about this post