ঢাকার মশা মারতে প্রতিবছরই বরাদ্দ বাড়ে৷ আর মশাও বাড়ে৷ দুই সিটিতে বছরে বরাদ্দ প্রায় দুইশ কোটি টাকা৷ বরাদ্দ বাড়ার পরও এবার ডেঙ্গুর যে প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে তাতে প্রশ্ন উঠেছে যে মশা মারার বরাদ্দ কার পেটে যায়?
এর মধ্যে দুই সিটিতে কচুরিপানা খাতে বরাদ্দ প্রায় চার কোটি টাকা৷
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন তাদের চলতি বাজেটে বরাদ্দ রেখেছে ৭২ কোটি টাকা৷ আগের বছর ২০২০-২১ সালে বরাদ্দ ছিলো ৭০ কোটি টাকা৷ আর ২০১৯-২০ সালে বরাদ্দ ছিলো ৫৮ কোটি টাকা৷
উত্তরের ২০২০-২১ অর্থবছরে মশা মারা বাজেটের মধ্যে ওষুধে ব্যয় হয়েছে ৪২ কোটি টাকা৷ কচুরিপানা পরিষ্কারে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা৷ ফগার, হুইল এবং স্প্রে মেশিন পরিবহনে ব্যয় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বিশেষ কর্মসূচি পালনে ব্যয় ৩ কোটি টাকা, অউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ব্যয় ১৫ কোটি টাকা৷
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২০২০-২১ এ মশা মারতে বরাদ্দ ছিলো ৩৫ কোটি টাকা৷ ২০১৯-২০ অর্থবছরে মশা মারতে মোট বরাদ্দ রাখা হয় ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা৷ তবে এবছর বাজেট এখনো পাশ না হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে মশা মারতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে বলে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ৷
২০১৯-২০ অর্থবছরে মশা মারতে ব্যবহৃত ওষুধ ও কীটনাশক বাবদ ৩৮ কোটি টাকা, কচুরিপানা ও জলাশয় পরিষ্কারে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা, ফগার ও হুইল মেশিন পরিবহনে বরাদ্দ চার কোটি টাকা৷
দুই সিটি মিলিয়ে বছরে মশা মারতে বরাদ্দ ১৭২ কোটি টাকা৷ এরমধ্যে কচুরিপানা পরিষ্কারে বরাদ্দ তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা৷
বছর বছর বরাদ্দ বাড়ার পর মশা কমে উল্টো বাড়ছে৷ এমন কেন হচ্ছে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্বের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন,”সমস্যা মশা মারার ওষুধ বা ফগিং মেশিনে নয়৷ সমস্যা হলো ব্যবস্থাপনায় ৷ কিউলেক্স ও এডিস মশার ধরণ আলাদা৷ ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা জন্মে স্বচ্ছ পানিতে, বাড়িঘরে, কনষ্ট্রাকশন সাইটে৷ লার্ভিসাইটে ওষুধ ছিটিয়ে এডিস মশার প্রজনন বন্ধ করা কঠিন৷
তার জন্মস্থল নষ্ট করতে হবে৷ আর সেটার বড় অংশ যেহেতু মানুষের বাসাবাড়িতে তাই নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷ তাদের কাজে লাগাতে হবে৷ সেটা তেমন করা হচ্ছে না। এই কাজটি করতে হয় সারা বছর ধরে৷ কিন্তু আমরা দেখি বর্ষাকালে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়৷ তাই বরাদ্দ বাড়লেও মশা কমে না”
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেন,” আমরা নগরবাসীকে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি এখন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি৷ আমাদের ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত এখন কাজ করছে৷ বুধবার আমরা ৫১টি বাড়িতে লার্ভা পেয়েছি৷ আমরা তো বাড়ির একদম ভেতরে ঢুকতে পারি না। আঙিনায় অভিযান চালাই৷”
ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন,”মশা কমেছে আবার বেড়েছেও৷ আমরা মারছি আবার জন্ম নিচ্ছে৷ এডিস মশা কমাতে হলে নগরবাসীর সহায়তা লাগবে৷ এজন্য আমরা ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছি৷ চিরুনি অভিযান চালাচ্ছি৷”
ঢাকার বাড্ডা-গুলশান লিংক রোডের গুদারাঘাটের লেকের পাড়ে মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য মশা দিনের বেলা পানির উপর আশ্রয় নিয়েছে৷ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই মশাগুলোই সন্ধ্যার পর আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে৷ মশার উৎপাতে অনেকে এলাকাছাড়া হয়েছেন বলেও জানান তারা৷
তিনি বলেন,” আমরা প্রচার চালিয়ে মানুষকে সচেতন করতে বেশ কিছু সুসজ্জিত ভ্যান চালু করেছি৷ স্লোগান তৈরি করেছি৷ কাউন্সিলদের সম্পৃক্ত করেছি৷”
দুই সিটির এই নানা উদ্যোগের মধ্যেই ঢাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে ২৪ ঘন্টায় আরো ১৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে৷ যা এই বছরে একদিনে সর্বোচ্চ৷ রোগীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগেরই ১৫০ জন৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত চলতি মাসে এক হাজার ৭২৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে৷ আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপর্যন্ত রোগী দুই হাজার ৯৮ জন৷ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ডেঙ্গুতে চারজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে
Discussion about this post