অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কতিথ নিরাপত্তার নিজেদের অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, গুম-অপহরণ ও মানুষ হত্যা চাপা দিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছিল শেখ হাসিনা। বর্তমানে সরকারের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ পত্রিকায় বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখলেই কথিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে তাদেরকে কারাগারে পাঠাচ্ছে। সরকার এই আইনটিকে এখন রীতিমত নীপিড়ন-নির্যাতনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। কিন্তু এমন নীপিড়নমূলক আইন করেও স্বস্তি পাচ্ছে না শেখ হাসিনা। এখন আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে ‘ডাটা প্রোটেকশন আইন’ নামে আরেকটি কালো আইন করতে যাচ্ছে সরকার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক ও ইউটিউব নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার দুইটি আইন প্রণোয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এমনকি বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে দেশের সীমানার বাইরে থেকে যারা নানা ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন তাদের ধরার জন্য আয়োজন চলছে।
নতুন আইন ও সংশোধনীর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলা হয়েছে, গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা সৃষ্টি বা ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায় ব্যবহৃত হচ্ছে ফেসবুক ও ইউটিউব। অ্যাকাউন্ট বাড়ছে টুইটার, ইনসটাগ্রাম, লিঙ্কডইন, টিকটক, লাইকি, বিগো লাইভের মতো প্ল্যাটফরম গুলোয়। আর এসব মাধ্যম ব্যবহার করে নারী পাচার, মাদক বিক্রি, উগ্র মৌলবাদ, অপপ্রচারের মাধ্যমে সমাজে ও রাষ্ট্রে সহিংসতা সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেয়া, দেশ ও সরকারবিরোধী প্রচারণা, ব্যক্তি বা নারীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও আপলোড করে নারীর সম্মানহানি, নগ্নতা থেকে শুরু করে নানা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে দাবি করা হয়।
কিন্তু বর্ণিত অপরাধ দমনে দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার সিকিউরিটি আইন ছাড়াও ফৌজদারি আইনে যথেষ্ট বিধি-বিধান বিদ্যমান রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের সময়ও উল্লেখিত অপরাধগুলো সামনে আনা হয়েছিল। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, এখন নতুন আইনের প্রয়োজন পড়ছে কেন?
এ দিকে বিদেশে বসে যারা কথিত ‘রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারে’ লিপ্ত, তাদের বিচারের আওতায় এনে শায়েস্তা করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সংশোধিত আইনের ৩ নম্বর ধারা মতে, যদি কোনো ব্যক্তি বিদেশে বসে দেশের কোনো টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বা যন্ত্রপাতির সাহায্যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটান, তাহলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইন এমনভাবে প্রয়োগ হবে যেন অপরাধের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশের ভেতরেই সংঘটিত হয়েছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ফাঁক-ফোকর থেকে মতপ্রকাশের যেটুকু সুযোগ অবশিষ্ট আছে তা বন্ধ করাই নতুন আইনের লক্ষ্য। সামাজিক মাধ্যমে কর্তাব্যক্তিদের ছিটেফোঁটা সমালোচনাও আর সহ্য করতে চায় না সরকার। মামলা, হামলা, নিপীড়নের মুখে নির্বাসিত জীবনে গিয়ে দেশের সীমানার বাইরে থেকে যারা অন্যায়, অবিচার, অনাচার, জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তাদেরকে কিভাবে উচিত শিক্ষা দেয়া যায় তা নিয়েই এই নতুন আইনের তোড়জোড়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন-শেখ হাসিন যতই আইনই করুক না কেন এসব করে তার শেষ রক্ষা হবে না। শেখ হাসিনা মূলত এখন কাচের গ্লাসের ভেতর বসে দেশ পরিচালনা করছেন। একটু ঝড় আসলেই তার এই কাচের গ্লাস ভেঙ্গে মাথার উপর পড়বে। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। সুতরাং এসব আইন দিয়ে জনগণকে দমিয়ে রাখা যাবেনা।
Discussion about this post