অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের হামলায় নিহতদের প্রতিবাদে সারাদেশে যৌথবাহিনীর মহড়ার মধ্যেও হেফাজাত ইসলামীর ডাকা হরতাল চলছে। ঢাকা সড়ক মহাসড়ক সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক পথে যান চলাচল বন্ধ করে রেখেছে হরতাল সমার্থকরা।
আজ ভোর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে রাখে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এ সময় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যৌথ বাহিনীর হামলায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে বহু হেফাজত কর্মী। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলছে গুলিবর্ষণ।
সাইনবোর্ডে বিজিবির সঙ্গে হেফাজত কর্মীদের সংঘর্ষ, শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর, গুলিবিদ্ধ ১
হরতালের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রামের প্রবেশমুখ সাইনবোর্ড এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেছে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।
আজ সকাল থেকে বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখে তারা। বেলা ১১টার দিকে পুলিশ বিজিবির সদস্যরা তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।
একপর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিজিবির সদস্যরা। এসময় উভয়পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় একজন হেফাজত কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন জানা গেছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জামেয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বেলা ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আনিসুর রহমানসহ স্থানীয়রা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তারা জানান, মাদ্রাসার ছাত্ররা রাস্তায় যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রথমে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা তাদেরকে লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া করে। পরে পুলিশও এসে যোগ দেয়।
উল্লেখ্য, সকাল থেকে মোহাম্মদপুর ও বসিলা এলাকায় মূল সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে কয়েকশ’ মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক অংশ নেয়। এ সময় বসিলা ব্রিজ থেকে শুরু করে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে পর্যন্ত রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নজিরবিহীন হরতাল, পুলিশের গুলি বর্ষণ
হেফাজতে ইসলামের ডাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলছে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল। হেফাজত কর্মীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে।
জানা যায়, সড়কে পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এখনও পর্যন্ত কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সিলেটের রাজপথে হেফাজতের নেতাকর্মীরা, যান চলাচল বন্ধ
সিলেটের রাজপথ দখলে রেখেছে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ফজরের নামাজের পরপরই তারা রাজপথে পিকেটিংয়ে নামে। এরপর থেকে তারা রাজপথে অবস্থান করছে।
বিশেষ করে সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট রয়েছে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের দখলে। সকাল থেকে কোর্ট পয়েন্টের ওভারব্রিজের নিচে হেফাজতের নেতারা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। ফলে কোর্ট দিয়েছে হালকা যানবাহনও চলাচল করছে না। হেফাজত নেতা পিকেটিং করছে ওই এলাকায়।
নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা দক্ষিণ সুরমায় হেফাজতের নেতারা সকাল থেকে রয়েছেন অবস্থানে। তারা হরতালের সমর্থনে ওই এলাকায় দফায় দফায় মিছিল করেছে। এ সময় লাঠিসোটা নিয়ে নেতাকর্মীরা পিকেটিং করতে চাইলে পুলিশ তাদের লাঠি নিয়ে যায়। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দুরপাল্লার কিংবা স্বল্পপাল্লার কোনো যানবাহনই চলাচল করছে না।
হরতালের কারণে সিলেট নগরীতে হালকা যানবাহন চলাচল করছে। ভারী কোনো যানবাহন রাস্তায় দেখা যায়নি। নগরীর সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান করছে পুলিশ। কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় হেফাজত নেতাদের অবস্থানের কাছাকাছি এলাকায় পুলিশ সাজোয়া যান নিয়ে অবস্থানে রয়েছে।
ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ
নোয়াখালী-ফেনী মহাসড়ক অবরোধ করেছেন হেফাজত ইসলামীর নেতাকর্মীরা। রোববার ভোরে তারা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জমিদারহাট এলাকায় মহাসড়কের ওপর বেশ কিছু গাছের গুঁড়ি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।
সকাল থেকে শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড, মাইজদীবাজার, পৌরবাজার ও দত্তেরহাট এলাকায় দেখা যায়, হরতালের সমর্থনে হেফাজতের কর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে পিকেটিং করছেন। এ ঘটনায় সোনাইমুড়ীতে দুই হেফাজত কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, সকাল থেকেই জেলার সব কটি উপজেলায় পুলিশ তৎপর রয়েছে। এর মধ্যেও হেফাজতের কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করছেন।
হাটহাজারীতে সড়কে খাল কেটে হেফাজতের অবরোধ
পুলিশ সঙ্গে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসা চট্টগ্রাম হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক কেটে অবরোধ করেছে। গতকাল হেফাজত নেতাকর্মীরা সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে ৫ ফুট উচ্চতায় এক দেয়াল তুলে দেয়। এরপর সড়ককে খাল খনন, বাঁশ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি দিয়ে মাদ্রাসার সামনে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।
আজও তাদের অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পথচারীরা কোনরকমে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ব্যাপক পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তবে ফজরের নামাজের পর থেকে রাস্তায় মাদ্রাসার ছাত্ররা অবরোধ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেনি।
অবরোধ কর্মসূচি বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাছির উদ্দিন মনির বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। কারো ক্ষতি করে ইসলাম কায়েম করা যায় না। আমাদের আজকের এই অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হবে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমার্থনে মিছিল ও পিকেটিং করে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
Discussion about this post