অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
১৬ই ডিসেম্বর, মহান স্বাধীনতা বিজয় দিবস। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির দিন এটি। জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন। এই দিনে পৃথিবীর বুকে ফুটে উঠেছিল নূতন মানচিত্র।
স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে দীর্ঘ সংগ্রামদীপ্ত কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য এবং চেতনা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে প্রবাসী সরকারের ঘোষিত মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল লক্ষ্য হচ্ছে ৩টি। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার বা ইনসাফ প্রতিষ্ঠাই হবে মূল লক্ষ্য। কিন্তুমুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুখে ফেনা তুললেও এই লক্ষ্য গুলোর ধারে কাছেও কি মানুষ পৌছাতে পেরেছে ৫০ বছরে? এই প্রশ্ন আজ সকলের সামনে।
গত এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতাসীন সরকার মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে গণতন্ত্রের পরিবর্তে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। সামাজিক ন্যায় বিচারের পরিবর্তে বিচার ব্যবস্থাকে করা হয়েছে আওয়ামীকরণ। সাম্যের পরিবর্তে বৈষম্যের পাহাড় উঁচু হচ্ছে দিনে দিনে।
বরং গুম, খুন ও বিচারবহির্র্ভূত হত্যাকাণ্ড পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সেই বর্বরতার কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে মানুষকে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একটি চাওয়া ছিল বৈষম্যের অবসান। বাঙালি জাতি যারা তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে বসবাস করতেন, তাদের সরকারি দায়িত্বপূর্ণ পদ ও কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন করা হতো। তারা বিভিন্নভাবে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ, শোষণ, নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার হতেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছিলো জনগণের নিজেদের শাসন করার অধিকার। বাংলাদেশ হবে জনগণের দেশ এবং জনগণের দ্বারা পরিচালিত দেশ; অর্থাৎ গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত দেশ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছিলো বাংলাদেশ হবে সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত, অন্যায়, অবিচার ও শোষণমুক্ত; অর্থাৎ অসাম্প্রদায়িক সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক দেশ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছিলো – গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করা।
এতে বলা হয়েছে – প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্ব কার্যকর হবে।
কিন্তু,২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন দিয়ে ভোট ডাকাতি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুণ্ঠিত করেছে শেখ হাসিনার সরকার।
বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্র বলা হলেও, শাসনকার্যে জনগণের অংশগ্রহণ এখন একদমই নেই। গণতন্ত্র আজ বিপন্ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ব্যবসা করছেন খোদ শেখ হাসিনা। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এছাড়া, বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, হেফাজতে নির্যাতন, ব্যাপক দুর্নীতির চিত্রও এখন আর গোপন নেই।
এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও পরিণত হয়েছে দলীয় কর্মীতে। সব জায়গায় নিজ দলের কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে পুরো রাষ্ট্রকে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত আছেন শেখ হাসিনা।
সব জায়গায় ব্যাপক বৈষম্য এবং দলীয়করণের ব্যাপক প্রভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাদে সাধারণ মানুষের পক্ষে চাকরী ও ব্যবসা-বাণিজ্য করা বলতে গেলে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
পুলিশ, র্যাব বাহিনীকে পরিণত করা হয়েছে লাঠিয়াল বাহিনীতে। সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত করে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন শেখ হাসিনা। ফলে নানান সুযোগ সুবিধা পেয়ে তারাও এখন ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চবাচ্য করেন না।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যাচ্ছেন অনেক মানুষ। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিয়ে আসছে বিজয় উৎসবে। প্রবাসী বাংলাদেশীরাও দিনটি পালন করছেন বিপুল আনন্দ-উৎসব এবং একই সঙ্গে বেদনা নিয়ে। দেশের স্বাধীনতার জন্য যে অকুতোভয় বীর সন্তানেরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, কৃতজ্ঞ জাতি গভীর বেদনা ও পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে তাদেরকে। কিন্তু এসব চেতনা শ্রদ্ধাবোধের আড়ালে দিন দিন প্রতারণার ফাঁদে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।