অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিরোধী দলকে দমন করতে আবারো আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার রাজনীতি শুরু করেছেন শেখ হাসিনা! আলামত যেন এমনটাই বলছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর অন্তত নয়টি স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। হঠাৎ করে এসব আগুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অফিস থেকে বাসামুখি মানুষ আজ বাসে উঠতেও ভয় পাচ্ছে।
৯টি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এনিয়ে নানান সন্দেহ-সংশয় ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আগুনের পর পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কে বা কারা এ আগুন দিয়েছে তারা বলতে পারছে না। কিন্তু সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ডিএমপি দাবি করেছে-বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বাসে আগুন দিয়েছে।
সচেতন মানুষ মনে করছেন-বিএনপি এখন রাজপথে কোনো আন্দোলনও করছে না। তারা বাসে আগুন দেবে কেন? বরং সরকারই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের দিয়ে আগের মতো পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে ফাঁসাতে বাসে আগুন দিয়েছে। এসব কাজে একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে। তারা অতীতেও এমন বহু ঘটনা ঘটিয়েছে।
এরপর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ডিজিএফআইয়ের সাথে মিটিং করেছেন। সকালে এই মিটিংয়ের পরই দুপুরে রাজধানীর একাধিক স্থানে বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন-ডিজিএফআই তাদের ক্রেডিট দেখাতেই মূলত পরিকল্পিতভাবে বাসে আগুন দেয়ার কাজটি করেছে।
তারপর, বাসে আগুনের ঘটনার সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তাৎক্ষণিক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।
তাদের এই সমাবেশও প্রমাণ করে বাসে আগুনের ঘটনাটি আওয়ামী লীগ ও সরকারের পূর্বপরিকল্পিত ছিল। বিএনপিকে দমনের অন্য কোনো ইস্যু না পেয়ে নিজেরাই বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপির উপর দায় চাপাচ্ছে।
এদিকে জনগণের ভোটের অধিকার হরণের চিত্র আড়াল করার লক্ষ্যে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে বিভিন্ন জায়গায় বাসে আগুন লাগিয়েছে সরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির দফতরের চলতি দায়িত্বে থাকা দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সের সাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সাথে লক্ষ্য করছি যে, আজ জাতীয় সংসদ ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপ-নির্বাচনের দিনে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ করে বিভিন্ন গণপরিবহনে আগুন দেয়া হয়েছে। এধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক।
বিএনপি মনে করে, ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ন্যাক্কারজনক ভোট ডাকাতি, জালিয়াতি, অনিয়ম, কারচুপি, সন্ত্রাস, বিরোধী দল তথা বিএনপি’র প্রার্থীদের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়া ও যারা প্রবেশ করেছিল ভোট শুরু হওয়া মাত্রই মারধর করে বের করে দেয়া, আওয়ামী লীগ কর্তৃক বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ভোটকেন্দ্র দখল ও অবরোধ করে সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা, জনগণের ভোটের অধিকার হরণের চিত্র আড়াল করার লক্ষ্যে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের দ্বারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহনে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে।
এসময় সরকার এসব দুস্কর্মের মাধ্যমে পূর্বের মতোই বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করা ও এর দায়-দায়িত্ব বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চাপিয়ে মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দায়ের করে হয়রানী করতে চায় বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চায়, এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে বিএনপি কখনোই জড়িত নয়। বিএনপি ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসের রাজনীতিতে নয়, বরং জনগণের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে রাজনীতি করে। এসময় সরকারের এই হীন ষড়যন্ত্র এবং মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হতে এবং সরকারকে এই হীন রাজনীতির পথ পরিহার করে স্বচ্ছ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসার আহবান জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, আজ দুপুরে ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপ-নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আহুত প্রেসব্রিফিং শেষে কার্যালয় ত্যাগ করার সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুকসহ কমপক্ষে ১২ জন নেতাকর্মীসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার করে। এমনকি এখন পর্যন্ত বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চতুর্দিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘেরাও করে কার্যতঃ অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
কার্যালয় থেকে যারাই বের হচ্ছেন কিংবা প্রবেশ করছেন সবাইকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ সময় তিনি গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের রাজনৈতিক কার্যক্রমের স্বার্থে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দেয়ার আহবান জানান।