অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বর্তমানে বাংলাদেশে যে দুইটি সংকট চরম আকার ধারণ করেছে, তা হল মানুষের বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার। রাষ্ট্রের সংবিধানে এই দুইটি বিষয় লিপিবদ্ধ ছাড়া বাস্তবে এগুলোর কোনো কার্যকারিতা নেই। দেশে সাংবিধানিকভাবে বিরোধীদলের অস্তিত্ব থাকলেও বর্তমানে তাদের কোনো অধিকার নাই। সরকারের অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে রাজপথে কোনো কর্মসুচি পালন করতে পারছে না বিরোধীদল গুলো। রাস্তায় নামলেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ দিয়ে হামলা চালাচ্ছে সরকার।
তারপর, দেশে বর্তমানে সবচেয়ে সংকটে আছে গণমাধ্যম। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে একটি কালো আইন প্রণয়ন করে দেশের গণমাধ্যমের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়েছে সরকার। সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আ.লীগ নেতাদের দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে সংবাদ করলেই ডিজিটাল আইনে মামলা, হামলা, গ্রেফতার। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এখন সরকারের সমালোচনা করে কেউ কিছু লিখতে পারছে না।
মানুষের বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরনের জন্য যাকে দায়ী করা হয়, সেই শেখ হাসিনার নিজের কি বাকস্বাধীনতা আছে? তিনি কি মন খুলে কথা বলতে পারছেন? স্বাধীনভাবে কি তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন?
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজেরই বাকস্বাধীনতা নেই। রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হওয়ার পরও তিনি স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। পরোক্ষভাবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে র্যাব-পুলিশ আর সেনাবাহিনী। বিশেষ করে তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে র্যাব-পুলিশ ও বিজিবির সহযোগিতায় শেখ হাসিনা একটি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছিল। ওই নির্বাচনের পর বিরোধীদলের আন্দোলনের মুখে হাসিনার ক্ষমতায় টিকে থাকাটায় কঠিন ছিল। তখন রাষ্ট্রের সব বাহিনী মিলে হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখে। বিনিময়ে তারা যা চেয়েছে হাসিনা তাদেরকে তাই দিয়েছে।
তারপর, একই কায়দায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনী মিলে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনে। এই দফায় দফায় হাসিনাকে ক্ষমতায় আনা ও টিকিয়ে রাখতে বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করার টার্গেট নেয় বাাহিনীগুলো। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনী সবাই গুম-অপহরণের সাথে জড়িত। তারা বিরোধীদলের নেতাকর্মীদেরকে শুধু গুম-অপহরণই করেনি, দুর্নীতি লুটপাটেও জড়িয়ে পড়ে এসব বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। হাসিনা ক্ষমতা ছাড়লেই তাদেরকে জেলে যেতে হবে। তারা তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও এখন উদ্বিগ্ন। হাসিনার মাথায় বন্দুকের নল রেখে তাকে ক্ষমতায় বসিয়ে রেখেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাহিনী প্রধানরাই এখন হাসিনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। শেখ হাসিনা চাইলেও নিজের ইচ্ছেমতো কিছু করতে পারছে না। বিশেষ করে হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকীর ভুমিকা উল্লেখযোগ্য। কারণ, রাজনৈতিক নেতাদের গুম-খুন ও অপহরনের সাথে তারেক সিদ্দিকী সরাসরি জড়িত।
সূত্রটি বলছে, শেখ হাসিনার নিজেরই এখন বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার নাই। জীবনের ভয়ে হাসিনা এখন মুখ খুলে কিছু বলতেও পারছে না।