অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনায় মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত ৮ মার্চ থেকে ২ জুন পর্যন্ত প্রায় তিন মাসে দুই সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যদিও সরকার বলছে করোনায় এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৭০৯।তাবে বিশ্লেষকরা বলছেন সরকার যে তথ্য দিচ্ছে সে তথ্য শুধুমাত্র শনাক্ত হওয়ার পরে যে মৃত্যু হয়েছে তার পরিসংখ্যান। শুধু তাই নয় আতঙ্ক কমাতে ও নিজেদের ইমেজ ঠিক রাখতে প্রথম থেকেই তথ্য গোপণ করে আসছে তারা। কিন্ত গণমাধ্যম বলছে সর্বশেষ গত ৭ দিনেই মৃত্যু হয়েছে দেড় শতাধিক মানুষের।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দেশের ২৫টি গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বিশ্লেষকদের মতে শুধু মৃত্যু নয় দেশে এখন প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। যদিও সরকারি তথ্য বলেছে বর্তমান আক্রান্তের সংখ্যা ৫২ হাজার ৪৪৫ জন। এছাড়া সুস্থতার হারেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছে পিস অবজারভেটরি (বিপিও)। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) একটি প্রকল্প। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপির আর্থিক সহায়তায় কয়েকটি বিষয় নিয়ে কয়েক বছর ধরে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে বিপিও।
বিপিও এর তথ্য মতে, গত ৮ মার্চ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত ১০১০ জনের করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী গত ১৭ই মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে করোনা শনাক্ত হয়ে ৭০৯ জন মারা গেছে। সব মিলিয়ে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত তিন মাসে প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে।
বিপিও বলছে, গত ৮ মার্চ থেকে করোনা বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য সংগ্রহ করে প্রতি সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। এতে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২১ মার্চের করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। পরের সপ্তাহে এটি দাঁড়ায় ৬ জনে। পরের সপ্তাহগুলোতে ১৯৩, ১৭৬ হয়ে ২২৩ এ পৌঁছায়। এভাবেই বেড়েই চলছে।
অনুসন্ধান বলছে সরকারের খামখেয়ালিপনা, দ্বায়িত্বহীনতা ও সঠিক তথ্য মানুষের কাছে তুলে না ধরে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে তথ্য প্রকাশ করা হয় সেটা আরও তিন দিন আগের। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে? এবং কোন পর্যায়ে এসে এই হার কমতে শুরু করবে? এসম্পর্কিত একটি মডেল রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট – আইইডিসিআর-এর হাতে রয়েছে। কিন্তু সরকারের ইমেজ রক্ষায় তারা এগুলো প্রকাশ করছে না।
দেখা গেছে, দেশে প্রাণঘাতী করোনার হানা দেওয়ার শুরু থেকেই মিথ্যাচার করে আসছে ক্ষমতাসীনরা। এছাড়া আক্রান্ত মৃত্যুর হার যখন প্রতিদিন বেড়েই চলছে তখন কোন নিয়ম তোয়াক্কা না করেই লকডাউন উঠিয়ে দেয় তারা। উর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই তাদের এমন ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই এ নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। তবে সরকারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, প্রতিদিন যেখানে করোনাভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে সে সময়ে লকটডাউন তুলে নেয়াটা ভুল ও ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। দুই মাসের লকডাউন তুলে নেয়ার পরে মানুষের চলাচল বেড়ে গিয়ে দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সীমিত সংখ্যক যাত্রী বহন করার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তবে গণপরিবহনে মানুষ যেভাবে গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে অভ্যস্ত এতে এ নির্দেশনা বজায় রাখা সম্ভব হবে কি না এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এর প্রমাণও আমরা ইতিপূর্বে পেয়েছি। লকডাউন থাকা অবস্থায়ও ফেরীঘাটে জনতার ঢল দেখে। সরকারের এমন দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে নিঃসন্দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাবে।