অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে স্থাপিত করোনা ইউনিটে ভর্তি শুরুর চার দিনেই ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গত ২রা মে একজন, ৩রা মে ১২ জন ও ৫ই মে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মেডিকেলের এই করোনা ইউনিটে। সব মিলিয়ে প্রথম ৪ দিনে মোট ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার মোহাম্মদ রিয়াজ তথ্য জানিয়েছেন। কিন্তু আইইডিসিআরের তথ্যমতে, গত চার দিনে সারাদেশে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১৩ জনের। যারমধ্যে গত ২রা মে ৫ জন, ৩রা মে ২জন, ৪ই মে ৫জন ও ৫ই মে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ক্ষমতাসীন সরকার শুরু থেকে করোনার তথ্য গোপন করে আসছে। ইতমধ্যে আইইডিসিয়ারের তথ্য প্রকাশের সময় তথ্যের গরমিল থাকায় ধরাও খেয়েছেন। এমনকি এসব তথ্য চাপা দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য জানার সুযোগ সীমিত করছে। সাংবাদিকেরা কোনো তথ্য খতিয়ে দেখলেই এমনটা হচ্ছে। এটা শুরু হয়েছে এপ্রিলের গোড়া থেকে, যখন কিনা প্রতিদিন দেশে শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ওয়ার্ড মাস্টার মোহাম্মদ রিয়াজ জানান, গত শনিবার (২রা মে) থেকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নতুন কোভিড-১৯ ইউনিটে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত এই ইউনিটে ভর্তি হওয়া ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে নমুনা পরীক্ষায় চারজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। বাকিদের মধ্যে করোনা উপসর্গ ছিল।
রিয়াজ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ২৬টি মরদেহ দাফনের জন্য মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই চার দিনে এই ইউনিটে মোট ৩০২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৫ জন করোনা ভাইরাস পজেটিভ। এদের মধ্যে সাত জনের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
দেখা গেছে, গত ৪ই মে ব্রিফিংএ বলা হয় ১৪৭ জন সুস্থ হয়েছেন। করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪৭ জন সুস্থ হয়েছেন। এরপর তিনি কোন কোন হাসপাতাল থেকে কতজন সুস্থ হন তার হিসাব তুলে ধরেন।
তিনি জানান, নতুন যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ১৩ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ১১ জন, ঢাকা মহানগর হাসপাতালের সাতজন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৩ জন, মিরপুর লালকুঠি হাসপাতালের চারজন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ জন রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্যান্য হাসপাতালের ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের সাতজন, রাজশাহী বিভাগের তিনজন, ময়মনসিংহ বিভাগের ১৭ জন, রংপুর বিভাগের চারজন এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ১৪ জন রয়েছেন।
এ সংখ্যা যোগ করলে দেখা যায় ১১৮ জন। এছাড়া গত রোববারের (৩ মে) উপস্থাপিত বুলেটিনে মোট সুস্থ দেখানো হয় এক হাজার ৬৩-এর সঙ্গে নতুন ১৪৭ জন যোগ করলে মোট সুস্থ এক হাজার ২১০ হওয়ার কথা থাকলেও ডা. নাসিমা এ সংখ্যা বলেন এক হাজার ২০৯। এনিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন সরকার। অন্যদিকে একদিনেই এত সুস্থতার হার নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললে সঠিক জবাব দিতে পরেনি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর।
ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন ‘করোনাভাইরাস রোগীদের কাছ থেকে নমুনা-রস সংগ্রহের কাজে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। একদিন নমুনা সংগ্রহ করে আরেকদিন তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেই তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে অন্য এক দিন। ফলে এর থেকে এখনই কোন সুনির্দিষ্ট মডেল তৈরি করা কঠিন। জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে পারে সেই বিবেচনায় আইইডিসিআর এর হাতে তথ্য থাকলেও প্রকাশ করছেনা’
দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং সম্ভাব্য মৃত্যুর হার নিয়ে গত ২৬শে মার্চে তৈরি জাতিসংঘের একটি ইন্টার-ডিপার্টমেন্টাল রিপোর্ট বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। এতে পূর্বাভাস করা হয়, বাংলাদেশে জনঘনত্বের বিবেচনায় করোনাভাইরাসে পাঁচ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষের জীবনহানি ঘটতে পারে। এছাড়া আইইডিসিয়ারও শঙ্কা করেছেন চলতি মাসেই ৫০ হাজার মানুষ আক্রান্ত ও ১০০০ জনের মৃত্যু হতে পারে।