অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ভারতের দিল্লিতে মুসলমানদের উপর ইতিহাসের এক বর্বর, নৃশংস ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে এখন পর্যন্ত ৩৭ জন নিহত হয়েছে। মোদি-অমিত শাহ’র পেটুয়া বাহিনী মুসলমানদের বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, তারা তিনটি মসজিদও পুড়িয়ে দিয়েছে। উগ্রবাদী হিন্দু সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে মুসলিম নারী-পুরুষরা সন্তানদেরকে নিয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
গত বছর ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের পর যখন বিজেপির তৎকালীন সভাপতি অমিত শাহকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার পরই ভারতের মুসলমানরা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ে। ওই সময় অ্যানালাইসিস বিডিতে ‘মুলমান নিধন করতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে অমিত শাহ?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এক বছর পর অ্যানালাইসি বিডির সেই প্রতিবেদনটিই সত্য প্রমাণিত হল। শুধু তাই নয় গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনেও ভারতে এ ধরনের সহিংসতার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন পাহিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের মধ্যে অমিত শাহ হল নরেন্দ্র মোদির সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। সবার পক্ষে হত্যাযজ্ঞ চালানো ও দাঙ্গা বাধানোর কাজ সম্ভব নয়। এ কাজে অমিত শাহ আগ থেকেই পারদর্শী। গুজরাট দাঙ্গার নায়ক ছিল অমিত শাহ। হত্যাযজ্ঞ আর দাঙ্গা সৃষ্টির দায়ে সুপ্রিম কোর্ট তাকে গুজরাট থেকে বিতাড়িত করেছিল। নরেন্দ্র মোদির ভাল করেই জানা ছিল যে, সব অপকর্ম একমাত্র অমিত শাহকে দিয়েই করানো সম্ভব হবে। সেই জন্যই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব তাকে দেন নরেন্দ্র মোদি।
দেখা গেছে, লোকসভা নির্বাচনের আগ থেকেই মুসলিম নিধন ও তাড়ানোর মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল অমিত শাহ। নির্বাচনের সময় একাধিক জনসভায় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তার দল বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারলে বাঙালি মুসলমানদের ধরে ধরে দেশ থেকে বের দেবো। কোনো অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান ভারতে থাকতে পারবে না। নির্বাচনের পর দেশটির সত্যিকার নাগরিকদের পরিচয় বের করার নামে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসা মুসলমানদেরকে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।
আর অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পরই দেশটির মুসলমানরা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছিল। তারা তখন আশঙ্কা করছেন, বিভিন্ন অজুহাতে তাদের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাবে বিজেপি। যাতে মুসিলমরা নিজ থেকেই ভারত ছেড়ে চলে যায়।
মুসলমানদের সেই আশঙ্কাই এখন সত্য হলো। গত চার দিন ধরে দিল্লিতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চলছে। মোদি-অমিত শাহ’র সন্ত্রাসী বাহিনী মুসলমানদের বাড়ি-ঘর ও মসজিদে আগুন দিলেও পুলিশ বাহিনী নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। বরং পুলিশের বিরুদ্ধে মসজিদে আগুন দেয়ার অভিযোগও উঠেছে। পুলিশের সামনেই বিজেপির পেটুয়া বাহিনী মুসলমান নারী-পুরুষকে পিটিয়ে তাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দিচ্ছে। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে কিছুই বলছে না। এটা থেকেই প্রমাণিত হয় যে, মোদি-অমিত শাহ’র নির্দেশেই পুলিশ ও বিজেপির গুন্ডারা হামলা-ভাঙচুর ও হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।
এদিকে মুসলিম-বিরোধী এই সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, নাৎসিবাদী আদর্শ দ্বারা উৎসাহিত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ১০০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত পরমাণু শক্তিধর দেশের ক্ষমতা দখল করেছে।
ইমরান খান বলেন, গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে দেয়া বক্তৃতায় তিনি ভারতে এ ধরনের দফায় দফায় সহিংসতার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন এবং ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থা আরো খারাপ হবে বলে ইমরান খান মন্তব্য করেন।
পাক প্রধানমন্ত্রী তার টুইটার পোস্টে বলেন, ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর দিয়ে শুরু হয়েছে। এবার ভারতের ২০ কোটি মুসলমানকে লক্ষ্যবস্তেুতে পরিণত করা হলো। এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ বিষয়ে কিছু করা উচিত।
টুইটার বার্তায় ইমরান খান সতর্ক করে বলেন, পাকিস্তানেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রয়েছে। তারা পাকিস্তানে সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে; কেউ যদি তাদের ওপর কিংবা তাদের উপসানালয়ের ওপর হামলা করে তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।