পলাশ মাহমুদ
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে ঘরে বাইরে কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপরই নাগরিকত্ব নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। দেশে আন্দোলন-বাইরে সমালোচনা। এমন পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গণে কূটনৈতিক বিজয় মোদীর জন্য খুব জরুরি। মোদীর এমন ইমেজ ক্ষয়ের মুহূর্তে তাই পাশে দাঁড়িয়েছেন মার্কিন মুলুকের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ট্রাম্প যে জাত ব্যবসায়ী তা আবারও বুঝিয়ে দিলেন।
ট্রাম্পের আগমন উপলক্ষে কয়েক সপ্তাহ ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছেন মোদী সরকার। বন্ধুকে খুশি করতে সবই করেছেন। এতে ভারতের খরচ হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি রুপির বেশি। ট্রাম্পের এই সফরের জানান দিতে শুধু বিজ্ঞাপনেই ১ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করেছে রাজ্য সরকার। অবশ্য এই বিপুল অর্থ ব্যয় নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
শনিবার কংগ্রেসের মহাসচিব প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগমনে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু এই অর্থ ব্যয় হচ্ছে একটি সমিতির মাধ্যমে। সমিতির সদস্যরাই জানেন না যে তারা এর সদস্য। দেশবাসীর কী জানার অধিকার নেই যে, কোন মন্ত্রণালয় ওই সমিতিকে কত টাকা দিয়েছে? সমিতির আড়ালে সরকার কী লুকোতে চাচ্ছে?’
কংগ্রেস জানতে চেয়েছে, নাগরিক অভিনন্দন সমিতির কর্মকর্তা কারা? কবে তৈরি হল সংস্থাটি? জমকালো আয়োজনের বিপুল অর্থ তারা পেল কোথা থেকে? দলটির সিনিয়র নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মার অভিযোগ, সরকারি ব্যয়কে বেসরকারি বলে চালাতেই ছদ্মনামের আশ্রয় নিয়েছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের সরকার।
এরই মধ্যে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভারতের পা রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দু’দিনের জন্য সপরিবারে এখন তাঁরা ভারতে। সফরের কর্মসূচিতে রয়েছে আহমেদাবাদ, আগ্রা ও নয়াদিল্লি ভ্রমণ। ভারতের উদ্দেশে ভ্রমণের আগেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, এই সফরে দেশটির সঙ্গে সীমিত বাণিজ্যিক চুক্তিরও সম্ভাবনা নেই। আর ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল হোয়াইট হাউজ। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনায় ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি উত্থাপন করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ঝানু বণিকরা জানেন বাজারমাত করতে হলে কী কৌশল নিতে হয়। প্রতিযোগীর দুর্বলতা জানতে হয়। দুর্বলতার সুযোগে মনোপোলি বাজার তৈরির মাধ্যমে সব মুনাফা নিজের ঘরে তোলা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আদতে একজন পাকা ব্যবসায়ী। তাই ঘরে বাইরে চাপে থাকা মোদীকে সফরের আগে আরও চাপে ফেললেন তিনি। উদ্দেশ্য কী? বণিকের উদ্দেশ্য যা থাকে ট্রাম্পই তাই দেখালেন। বাগিয়ে নিলেন প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য।
প্রথমবারের মতো ভারত সফরে এসে সোমবার ‘নমস্তে ট্রাম্প’ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাও মারার ঘোষণা দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়েছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তির হচ্ছে। এ চুক্তি হবে মঙ্গলবার। চুক্তির আওতায় ভারতকে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে ভারত কী পেল? শতকোটি রুপি খরচ করে ট্রাম্পকে আতিথেয়তা দিয়ে মোদী কি হাতেই থাকলেন? তা একেবারে বলা যাবে না। কারণ, মোদীর কূটনৈতিক বিজয় হয়েছে। ট্রাম্প মোদীর পাশেই আছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিশীল। আমেরিকা-ভারত ইসলামি চরম্পন্থিদের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্র নিজের সীমান্ত নিরাপদ করতে কাজ করছে। অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে যে কোনো দেশেরই নিজের সীমান্ত রক্ষার অধিকার আছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সময় নিউজ।