অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সম্প্রতি মুরাদ হাসানের ঘটনায় আবার সমালোচানায় উঠে এসেছে নারীলিপ্সু ইউটিউবার নাহিদ রেইন্স। দেখা গেছে ক্ষমতাসীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে লাইভে নিয়ে এসে উস্কে দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে বিভিন্ন ধরণের কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন। শুধু তাই নয় প্রতিমন্ত্রীর করা অশ্লীল মন্তব্যে বিভিন্ন প্রকার অশ্লিল অঙ্গভঙ্গি করে এই নাহিদ রেন্স। সেই লাইভ এর ভিডিও ছোট ছোট কিরে বিভিন্ন ভাবে ছড়িয়ে দিতে থাকে অনলাইন জুড়ে। এরপর জনগণের তোপের মুখে প্রতিমন্ত্রী মুরাদকে যখন পদত্যাগের নির্দেশ দেয় হাসিনা, তখনই নিজে লাইভে এসে ক্ষমা চান এই নারীলিপ্সু ও প্রতারক। কিন্তু এর আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে মুরাদ হাসানের অশ্লিল কথা প্রচার করে সত্য প্রমাণের জন্য মারিয়া হয়ে উঠে এই সরকার দলীয় ইউটিউবার।
এর আগে আলেমদের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্যকে আংশিক প্রচার করে ভন্ড অখ্যা দিয়ে ভিডিও তৈরী করে অপপ্রচার করে। এছাড়া বিজ্ঞানের বিগ ব্যাং থিউরিকে অপব্যাখ্যা দিয়ে পড়েছেন জনগণের রোষানলেও। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিতর্কিত ভিডিও তৈরী করে বাড়িয়েছেন নিজের ইউটিউব চ্যানেলের সাব্সক্রাইবার। হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
কে এই নাহিদ রেইন্স? অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে দেখা গেছে নাহিদ রেইন্স যার পুরো নাম নাহিদ করিম হেলাল। বিভিন্ন সময় বিতর্কিত ভিডিও তৈরী করে নিজের দিকে মানুষকে প্রলুদ্ধ করত এই রেইন্স। তার জন্য মূল অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করতো (Bangladeshism) এবং (NahidRains Pictures) নামে তার দুটি ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল। বিভিন্ন সময় তার মতাদর্শের ভিত্তিহীন ভিডিও তৈরী করে জনগণের তোপের মুখেও পড়েছেন তিনি। এছাড়া নারী কেলেঙ্কারি, টাকা আত্মসাৎ, জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত এই নাহিদ রেন্স।
টাকা আত্মসাৎ করে উল্টো হুমকি
বিভিন্ন বিদেশী প্রতিষ্ঠান থেকে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই নাহিদ। অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন প্রবাসী মিরাজ নাঈম নামে এক ব্যক্তির নিকট থেকে বাংলাদেশী মুদ্রামানে (নগদ ও চেকের মাধ্যমে) আট লাখ টাকা অর্থ আত্মসাৎ করেছিল এই নাহিদ। জানা যায়,‘জীবনায়ন’ নামে একটি সিনেমার প্রডিউসার হওয়ার লোভ দেখিয়ে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় । এরপর আরো ১ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট মারে এই রেইন্স। কিন্তু বাস্তবে এই সিনেমার কোন শুটিং করতেও দেখা যায়নি। এরপরও নাহিদ বিভিন্ন অযুহাতে টাকা চাইতে থাকলে মিরাজ চুক্তির বাইরে একটা পয়সাও দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। আর টাকা না দিলে ঐ প্রবাসীকে হত্যার হুমকি দেয়। অথচ চুক্তি মোতাবেক সিনেমার সব টাকাই নাহিদকে অগ্রিম দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই সিনেমার কোন অস্তিত্ব দেখা যায়নি।
এরপর অষ্ট্রেলিয়ান এই প্রবাসী মিরাজ ঠগবাজ নাহিদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা করে। মামলার প্রেক্ষিতে র্যাব নাহিদকে গ্রেফতার করে থানা হাজতে আটকে রাখলে তিন দিন পর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। জামিনে ছাড়ার পর নাহিদের পরিবার থেকে মিরাজকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেয়। তখন টাকা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত মামলা চালিয়ে যাবে বলে জানান এই প্রবাসী।
জানা গেছে, মিরাজকে টাকা ফেরত অথবা প্রজেক্ট শেষ করে দেয়ার মুচলেকা দিয়ে ডিবি পুলিশের হাত থেকে জামিন পায় নাহিদ। কিন্তু মুচলেকায় স্বাক্ষর করলেও আজ পর্যন্ত মিরাজ সেই ৮ লাখ টাকা ফেরত পায়নি। নাহিদ হেলালের পরিবার থানায় টাকা পয়সা দিয়ে মামলাটা ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা ও উল্টো মিরাজকে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর মিরাজ অষ্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ (AFP)এবং ঢাকাস্থ অষ্ট্রেলিয়ার দূতাবাসে তথ্য প্রমানসহ নাহিদের ব্যাপারে লিখিতভাবে জালিয়াতির অভিযোগ করে।
পরীক্ষায় জালিয়াতি
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পাশ করতে পারেননি এই প্রতারক। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে পরীক্ষায় জালিয়াতি করার অভিযোগ। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নকল করার দায়ে বহিষ্কার করা হয় তাকে। এছাড়া বিদেশী অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আত্মসাৎ করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
নারী কেলেঙ্কারি
বিভিন্ন সময় সময় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের মডেল হওয়ার লোভ দেখিয়ে হেনস্তা করতো এই নাহিদ। চট্টগ্রামের এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক মেয়েকে মডেল বানানোর নামে ন্যূড ফটোশুট করার প্রস্তাব দেয় সে। এরপর ঐ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাজি না হলে বিভিন্ন সময় তাকে জোরপুর্বক হেনস্তা করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে সে নাহিদের সাথে সমস্ত ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
ইসলাম বিদ্বেষী
ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন সময় কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন এই নাহিদ রেন্স। দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে আলেমদের দেওয়া বক্তব্যকে আংশিক প্রচার করে ভন্ড অখ্যা দিয়ে ভিডিও তৈরী করে অপপ্রচার করে। এমনকি মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে নিয়েও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিজ্ঞানের বিগ ব্যাং থিউরিকে অপব্যাখ্যা দিয়ে পড়েছেন জনগণের রোষানলেও।
সিনেমাটোগ্রাফি শেখানোর নামে ছল চাতুরি
সিনেমাটোগ্রাফি শেখানোর নামে অনেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। নাহিদের কাছে সিনোমাটোগ্রাফি শিখতে এসেছিলেন চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে পড়ুয়া একজন যুবক। নাহিদ তার কাছ থেকে প্রথম দিনই কোর্স ফি বাবদ একটা মোটা অংকের টাকা দাবি করে। এরপর ঐ শিক্ষার্থী তার বন্ধুদের থেকে ধার করে সে টাকা জোগাড় করে নাহিদকে দেয়। কিন্তু দিন যেতে থাকে, নাহিদ তাকে কিছুই শেখায় না। একটা পর্যায়ে টাকা ফেরত চাইলে ঐ শিক্ষার্থীকে হুমকি দেয় রেইন্স।
এছাড়া নাহিদ হেলালের সাথে টাকা পয়সার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া হলে ক্ষতিগ্রস্তরা নাহিদের ঢাকাস্থ স্টুডিও ভাংচুর করে এবং তাকে পিটিয়ে জখম করে। এই ঘটনার পর আর সে ঢাকাতে তার ধান্ধাবাজির ব্যবসা করার সাহস পায়নি। হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে সে তার স্টুডিও গুটিয়ে নিয়ে যায় তার পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামে। কথিত গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালীন সময়ে নাহিদের বিরুদ্ধে নারী ঘটিত বেশ কিছু অভিযোগ ওঠে। সে সময়ে একাধিক মেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বিরোদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে স্ট্যাটাস দেয়।
দেখা গেছে, বিভিন্ন সময় পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার প্রজেক্ট নিয়ে মাঠে নামে রেইন্স। ইতিহাস বিকৃত করে ভিডিও বানিয়ে তার পেজে আপলোড করে জনগণের রোষানলে পড়েন এই নারীলিপ্সু।