অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ভোট ডাকাতির আরও একটি নজির স্থাপন করল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবার চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে ১৭০টি ভোট কেন্দ্রের সবগুলো দখল করে নৌকায় সিল মারিয়ে নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করা হয়।
দেখা গেছে, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে দেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলোতেই নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় ইউপি নির্বাচন পর্যন্ত এমন কোনো নির্বাচন নেই যেটাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দিয়ে কেন্দ্রদখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জালভোট প্রদান, ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা দান, হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাননি।
আর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনতো ভোট ডাকাতির নির্বাচন হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এতসব করার পরও শেখ হাসিনা ৯৪ সালের ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত মাগুরা-২ আসনের সেই উপনির্বাচনের উদাহরণ দেন। তার দলের নেতারাও বলেন-দেশে আর কখনো মাগুরা মার্কা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। অথচ শেখ হাসিনা বিগত ১১ বছরে দেশে আরও শত শত মাগুরার জন্ম দিয়েছেন। একেবারে সর্বশেষ ঘটনা হলো-সোমবার চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই আসনে মোট ভোট কেন্দ্র হলো-১৭০টি। সকাল ৮টায় ভোট শুরু হওয়ার পর বেলা ১১টার মধ্যেই সবগুলো কেন্দ্র আওয়ামী-যুবলীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডাররা দখল করে নেয়। সবগুলো কেন্দ্র থেকে বিএনপি প্রার্থী আবু সফিয়ানের এজেন্টদের বের করে দেয় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা। আবু সফিয়ানের পক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং একচোখা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নির্বাচন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু, সুন্দর ও অবাধভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি প্রার্থী যেসব অভিযোগ করেছেন সবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে আ.লীগ প্রার্থীকে জেতানোর পর রাজনীতিক মহল বলছেন, মাগুরা থেকেই নির্বাচনে কারচুপির মেকানিজম শুরু হয়েছিল। ২৪ বছর পর শেখ হাসিনা সেই মাগুরার প্রতিশোধ নিয়েছেন। এই নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা এখন আর মাগুরার উদাহরণ দিয়ে বিএনপির সমালোচনা করতে পারবেন না। কারণ, চট্টগ্রাম-আসনের উপনির্বাচন মাগুরাকেও হার মানিয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সাংস্কৃতিক অভিরুচি একই ধরণের বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বে ভোটের প্রসাধনী ছাড়া সুষ্ঠু ভোট কখনোই হবে না। এই আওয়ামী আমলে মানুষ ফেনী মার্কা নির্বাচন দেখেছে,এখন হুদা মার্কা নির্বাচন দেখছে। এরপরেও মানুষ আরও কি মার্কা নির্বাচন দেখবে সেটির প্রতীক্ষা করছে। তাদের সকল আমলের নির্বাচনে হিংসা আর ভোট-লুটের গল্প ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবে না। সিইসি হিসেবে কেএম নুরুল হুদাকে বাছাই করা হয়েছে কেবলমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনকে গোরস্থানের স্থায়ী বাসিন্দা বানাতে।
সত্য ঘটনাকে মিথ্যা বলা আওয়ামী লীগের এই আদর্শিক ইশতেহার আতস্থ করেছেন সিইসি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সাংস্কৃতিক অভিরুচি একই ধরণের। সেটি হলো-নিরস্ত্র ভোটারদেরকে অবৈধ ক্ষমতা প্রদর্শন। ভোট ডাকাতি, ভোট সন্ত্রাস, জালভোট, ভোট কেন্দ্র দখল ও অবৈধ অস্ত্রের আস্ফালনে আওয়ামী লীগের যে বিজয় নিশান উড়ে সেই নিশানে হাওয়া দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এখন জনমনে ভোট মানেই যে প্রহসন সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের আগের দিন বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি, হামলা আর ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান করা হয়েছে। ১৭০টির মধ্যে সকালবেলায় ১২০টি ভোটকেন্দ্র থেকে এবং পরে সকাল ১১টার মধ্যে সবকটি কেন্দ্র দখল করে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।