অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দীর্ঘদিন পর আবারো ফতোয়ার ঝুলি নিয়ে মাঠে নেমেছেন কওমী মাদরাসার আলেমরা। তাদের এই ফতোয়া কোনো বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে নয়। ইসলাম বিদ্বেষী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে নয়। যারা এদেশ থেকে ইসলাম, কুরআন-সুন্নাহ, ইসলামী সংস্কৃতি, কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করা ইসলামী সংগঠন, মাদরাসা-মসজিদ মুছে দিতে চায় তাদের বিরুদ্ধেও নয়। তাদের ফতোয়া হলো-এমন সব ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে যারা কুরআন-সুন্নাহর কথাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরছেন। যারা অনেক ঝঁকি নিয়ে স্বৈরাচারী শাসক ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন। তাদের ফতোয়া সেই সব ইসলামী সংগঠনের বিরুদ্ধে যেসব সংগঠন বাংলাদেশে আল্লাহর হুকুমাত প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তদের ফতোয়া ইসলামী আন্দোলনের সেই সব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যারা ইসলামী হুকুমাত প্রতিষ্ঠার কাজ করতে গিয়ে বার বার স্বৈরশাসকের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
প্রায় ২০ বছর যাবত এদেশের মানুষ ফতোয়াবাজদের কবল থেকে মুক্ত ছিল। ৮০’র দশক থেকেই এদেশে কওমী আলেমদের ফতোয়া শুরু হয়। ৯০’র দশকে মূলত কওমী আলেমরা ফতোয়ার ঝুলি নিয়ে সবাই একযোগে মাঠে নামে। তাদের ফতোয়া ছিল দুই শ্রেণির লোকদের বিরুদ্ধে।
প্রথমত: খোদাদ্রোহী, ইসলাম বিদ্বেষী ও বাতিল শক্তির চেয়েও কওমী আলেমরা এদেশের আলিয়া মাদরাসার আলেম ও শিক্ষার্থীদেরকে তাদেরকে প্রধান শত্রু হিসেবে মনে করতেন। কাফের, ফাসিক, মুনাফিক থেকে শুরু করে এমন শব্দ নেই যা তারা ব্যবহার করেনি। এমনকি দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষকেও তারা আলিয়া মাদরাসার আলেমদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতো। কোনো কোনো এলাকায় তাদের ফতোয়ার কারণে বাড়ি বাড়ি দ্বন্দ্ব লেগে যেতো।
দ্বিতীয়ত: এরপর তাদের ফতোয়ার লক্ষ্যবস্তু ছিল এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সর্ববৃহৎ ইসলামী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে। তারা জামায়াতে ইসলামীর নেতাদেরকে প্রকাশ্যে জনসভা ও ওয়াজ মাহফিলে কাফের বলে ফতোয়া দিতেন। কওমী আলেমরা সমাজের মসজিদগুলোতে জুময়ার খুৎবায় কুরআন-হাদীসের মৌলিক বিষয়ের আলোচনা বাদ দিয়ে শুধু জামায়াতের সমালোচনা করতেন। মানুষকে এমনও বলতেন যে, যারা জামায়াত করে তাদের ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়া জায়েজ হবে না। এমনকি আওয়ামী লীগের মতো তারাও বিশ্বাস করতো যে ইসলামে কোনো রাজনীতি নেই। তাদের এই ফতোয়া চলতে থাকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যখন ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করে তখন কওমী আলেমরা আস্তে আস্তে মাঠে নামতে শুরু করে। বিশেষ করে ফতোয়াকে নিষিদ্ধ করে আইন পাস করার পর ফতোয়াবাজ আলেমদের টনক নড়ে যে এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে আর হবে না। তখন একসঙ্গে সবাই সরকারের বিরুদ্ধে মঠে নামে। পুলিশ যখন তাদের ওপর নির্যাতন শুরু করলো তখন তারা বুঝতে পারলো যে জামায়াতে ইসলামী দেশে আসলে কি করছে। তারা আরও বুঝতে পারে যে, আলিয়া মাদরাসার আলেমরা আসলে তাদের শত্রু নয়। তাদের প্রকৃত শত্রু হলো আওয়ামী লীগ। শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হককে গ্রেফতারের পর আলিয়া মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক এবং জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমে বিক্ষোভ করেছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগের পিটুনি খেয়ে পরে তারা বিএনপি জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে যোগ দেয়। সব ভেদাভেদ ভুলে এককাতারে এসে সবাই মিলেই ইসলাম বিদ্বেষী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামে।
এরপর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কওমী আলেমদের ফতোয়াবাজি এক বন্ধ ছিল। ২০১৯ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসেন টঙ্গির একটি কওমী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। তার এই ফলাফল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই কওমী আলেমরা আলিয়া মাদরাসা ও জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ফতোয়ার ঝুলি নিয়ে আবার মাঠে নামে। ওয়ালী উল্লাহ আরমান ও জুনাইদ হাবিব নামে দুই ফতোয়াবাজ প্রতিদিন এনিয়ে ফেসবুকে নোংরা ভাষায় জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে।
এরপর, এখন আবার তারা শুরু করেছে এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারিকে নিয়ে। কওমী আলেমরা সারাদেশে প্রচার চালাচ্ছে যে, মিজানুর রহমান আজহারী জামায়াতের লোক। তিনি ভুল তাফসির করেন। তার আলোচনার খন্ডিত অংশ প্রচার করে তারা সারাদেশের মানুষকে চরমভাবে বিভ্রান্ত করছে।
ফেসবুকে তারা অশালীন ভাষা ব্যবহার করে মিজানুর রহমান আজহারীকে গালিগালাজ করছেন। দেখা গেছে, আজহারী একটি কথা বলছেন একভাবে, আর তারা সেটাকে অন্যভাবে ঘুরিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে ফেসবুক পোস্ট করছেন।
তবে মজার বিষয় হলো-আজহারির বিরুদ্ধে কওমী আলেম যত উল্টা পাল্টা ফতোয়া দিচ্ছেন, আজহারীর জনপ্রিয়তা দিন দিন ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজহারী যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই মানুষ পঙ্গপালের মতো ছুটে যাচ্ছে। আজহারীর প্রতিটি মাহফিলেই এখন কয়েক লক্ষ করে লোক সমাগম হচ্ছে।
সচেতন মানুষ মনে করছেন, শুধু প্রতিহিংসা থেকেই কওমী ও মাজারপুজারীরা মিজানুর রহমান আজহারীর বিরুদ্ধে ফতোয়াবাজি করছে। আজহারীর জনপ্রিয়তা তারা সহ্য করতে পারছে না।