অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
৩০ নভেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে পেশাদার সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নির্বাচন। প্রতি বছর এ নির্বাচন আসলে ডিআরইউ’র সদস্যদের মধ্যে বিরাজ করে আনন্দ-উৎসবের আমেজ। সব সময় এখানে শতভাগ স্বচ্ছ, সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়ে আসছে। দেশে এখনো গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের কোনো জায়গা যদি থাকে তাহলে সেটা ডিআরইউ। পেশাদার সাংবাদিকদের এই সংগঠনটির ওপরও এখন বিনাভোটে ক্ষমতা দখলকারী শকুনদের চোখ পড়েছে। যার কারণে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর প্রথমেই চোখ পড়ে সাংবাদিকদের প্রাণকেন্দ্র জাতীয় প্রেস ক্লাবের ওপর। প্রেস ক্লাব নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী প্যানেল কামাল উদ্দিন সবুজ ও সৈয়দ আবদাল আহমদের প্যানেল হারানোর জন্য নোংরামির এমন কিছু নেই যা তারা করেনি। ভোট গণনার সময় প্রেস ক্লাবের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন করে দিয়েছিল সরকার। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাতেও বিলম্ব করেছিল। কিন্তু প্রতিবাদের মুখে ওই বার দখল করতে পারেনি আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকরা।
পরবর্তীতে তারা জোর করে প্রেসক্লাবের দখল নেয়। আওয়ামীপন্থী মিডিয়া হাউজের কর্মচারীদেরকেও প্রেসক্লাবের সদস্য বানানো হয়েছে। প্রেস ক্লাব দখলের জন্য তারা আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকদেরকে গণহারে সদস্য পদ দিয়েছে। এভাবে তারা জাতীয় প্রেস ক্লাব দখল করে এটাকে ভোগ করছে।
প্রেস ক্লাব দখলের পর ক্ষমতাসীনদের চোখ পড়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ওপর। তাদের স্লোগান হলো ডিআরইউ থেকে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদেরকে বিদায় করতে হবে। মূলত এটাকে তারা বঙ্গবন্ধু ক্লাবে পরিণত করতে চায়। এ লক্ষ্যে ডিআরইউ দখলের খেলাটা তারা গত বছর থেকেই শুরু করেছে। সংগঠনটির বর্তমান সেক্রেটারি বাসসের সাংবাদিক কবির আহমদ খান একজন চিহ্নিত আওয়ামীলীগার হিসেবে পরিচিত। শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশ ছিল কবিরকে ডিআরইউ’র সেক্রেটারি করতে হবে। যেই কথা সেই কাজ। কবির সেক্রেটারি হওয়ার পর থেকেই কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে এটাকে বঙ্গবন্ধু ক্লাবে পরিণত করে।
গত এক বছরের ডিআরইউ’র মাসিক পত্রিকা দেখলে কোনোভাবেই বুঝার সুযোগ নেই যে এটা একটি পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠনের মাসিক মুখপত্র। দেখাগেছে, প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা থেকে শুরু করে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত শুধু শেখ মুজিব-শেখ হাসিনার কথিত উন্নয়ন আর কথিত চেতনায় ভরপুর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিআরইউ’র নির্বাচন নিয়ে এবারও মাস্টার প্লান করেছে বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতি-সেক্রেটারিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখলে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারের পরিকল্পনার খবর ইতিমধ্যে সাংবাদিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করেছিল তা এখন বিষাদে পরিণত হচ্ছে।
যে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগ-আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সেটা হলো সভাপতি প্রার্থী জিটিভির প্রধান প্রতিবেদক রাজু আহমদের নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘটনা। তিনি আওয়ামী লীগপন্থী সভাপতি প্রার্থী শাহনেয়াজ দুলালকে সমর্থন দিয়ে বসে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজু আহমদ আর বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত সভাপতি পদের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম আজাদের মধ্যে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার কথা ছিল। আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকদের সভাপতি প্রার্থী শাহনেয়াজ দুলালের ভরাডুবি নিশ্চিত ছিল। সরকার এটা বুঝতে পেরে চাপ প্রয়োগ করে রাজু আহমদকে সরে দাড়াতে বাধ্য করেছে।
রাজু আহমদ চাপের মুখে সরে দাড়ানোর বিষয়টি প্রকাশ না করলেও খবরটি সাংবাদিকদের কাছে চলে আসছে।
এসব নিয়ে এখন ডিআরইউ’র সদস্যরা সুষ্ঠু ভোট নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন তারা।
অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন-ডিআরইউ নির্বাচনে হচ্ছে টা কি? সাংবাদিকদের এই সংগঠন নিয়ে এমন নোংরামি কেন? কেউ কেউ বলছেন-ভোটের কি দরকার? সভাপতিকে ঘোষণা দিয়ে দিলেই চলে।