অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কথিত দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও তার দল থেকে মাইনাস করার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ করে শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরেই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে আসছে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ২ কোটি টাকার কথিত দুর্নীতির মামলায় অনুগত বিচারকের মাধ্যমে ফরমায়েশি রায় দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করেছেন ক্ষমতাসীন সরকার।
খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই গত ৩০ ডিসেম্বর নজিরবিহীন ভোটডাকাতির মাধ্যমে আবার ক্ষমতা দখল করেন শেখ হাসিনা। আর শেখ হাসিনার এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তাকে সহযোগিতা করেছে ড. কামাল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম রব, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কথিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আর তাদের এই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়েছেন ব্যারিস্টার মওদুদ, আব্দুল্লাহ আর নোমান, ড. মঈন খান, খন্দকার মোশাররফ, জেনারেল মাহবুবসহ দলটির গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু নেতা। ২০ দলীয় জোট এবং বিএনপির তৃণমূলের মতামতকে উপেক্ষা করেই ড. কামাল-জাফরুল্লাহর চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়ে মির্জা ফখরুল কোনো দাবি আদায় না করেই নির্বাচনে অংশ নেন।
নির্বাচনের পর খালেদা জিয়া এবং তার বড় ছেলে তারেক রহমানকে বিএনপি থেকে মাইনাস করার জন্য সরকার তথা শেখ হাসিনা নতুন করে আবার চক্রান্ত শুরু করে। সরকারের এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে ড. কামাল ও ডা. জাফরুল্লাহ। একাধিকবার ডা. জাফরুল্লাহ বিভিন্ন টকশোতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের হুমকি-ধামকি দিলেও কার্যত তারাও চিকিৎসার নাম করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য গোপনে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের এই চক্রান্ত বাস্তবায়নে এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিএনপির ৬ জন এমপি।
গত তিন দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির ৬ এমপির সাক্ষাৎ, এনিয়ে সরকারের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা ও গণমাধ্যমে দেয়া তাদের বক্তব্য অনেক রহস্যের জন্ম দিয়েছে।
প্রথমত: দুই মাস পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছে তার পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতাল এবং কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা বার বার যোগাযোগ করে সাক্ষাতের অনুমতি পাননি। কারা কর্তৃপক্ষের জবাব-উপরের নির্দেশ না থাকায় তারা অনুমতি দিতে পারছে না। এরপর এসব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারের সদস্যদেরকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেন।
এখন প্রশ্ন হলো-অসুস্থ খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদেরকে দেখা করার সুযোগ দেয়নি সরকার। কিন্তু সরকারের নির্দেশে সংসদে যোগ দেয়া এমপিরা আবেদন করা মাত্রই তাদেরকে অনুমতি দিয়ে দিল। তাদের কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের নির্দেশেই বিএনপির ৬ এমপি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে খালেদা জিয়াকে রাজি করানোর জন্যই মূলত সরকার তাদেরকে পাঠিয়েছিল। সরকারের টার্গেট খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠিয়ে বিএনপিকে জাতীয় পার্টির মতো একেবারে হাতের কব্জায় নিয়ে আসা। যার কারণে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এমপি হারুন আবার তড়িগড়ি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করেছেন।
দ্বিতীয়ত: খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এমপি হারুন বলেছেন, খালেদা জিয়া নিজ থেকেই বিদেশ যেতে রাজি হয়েছেন। খালেদা জিয়ার এই সম্মতির কথা তিনি সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদেরকেও জানিয়েছেন।
কিন্তু বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, এমপি হরুন খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া তার এই প্রস্তাবে রাজি হননি। খালেদা জিয়া তাদেরকে বলেছেন, আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। যত দিন বেঁচে থাকি এভাবে থাকবো। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার শর্ত দিয়ে আমি মুক্ত হবো না।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী। শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি কোনো আপস করবেন না। দু:খজনক বিষয় হলো-নেত্রীকে মাইনাস করার জন্য সরকার যে ষড়যন্ত্র করছে তাতে আমাদের দলের কিছু সুবিধাভোগী নেতাও যোগ দিয়েছে। সরকারের ষড়যন্ত্রে তারাও পা দিয়েছে। তবে, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস খালেদা জিয়া এভাবে মুক্ত হবেন না।