অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
টানা দশ বছর বিনা ভোট আর ভোট ডকাতির মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতা ধরে রেখে পুরো দেশটাকে আওয়ামী লীগ অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অপরাধ প্রবেশ করেছে। এমন কোনো অপরাধ নেই যেটা বর্তমানে দেশে হচ্ছে না। আর এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
তাদের নেতৃত্বে দেশে জোরপূর্বক ধর্ষণ, চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট, মানুষের জমি ও বাড়িঘর দখল, মসজিদ, মাদরাসা ও স্কুল কলেজ দখল, খুন-হত্যাসহ যাবতীয় অপকর্ম হচ্ছে।
গত বুধবার রাতে রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়ংমেন্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ওরফে ল্যাংড়া খালেদের ক্যাসোনিতে জুয়া ও মাদকের আসর থেকে তরুণীসহ ১৪২ জনকে আটক করেছে র্যাব। এই সময়ে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে ওই যুবলীগ নেতাকেও। অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মাদক, জুয়ার সামগ্রী ও নগদ ২০ লাখ টাকা জব্দ করেছে র্যাব।
জানা গেছে, ওই ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন যুবলীগ নেতার আয় ১ কোটি টাকা। এটাকে এক প্রকার পতিতালয়ও বলা যায়। যুবলীগ নেতার এই ক্যাসিনোতে অবাধে চলে দেহ ব্যবসা। আর এটাই কিন্তু আসল নয়। এটা অপরাধের খন্ডচিত্র মাত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগের ছত্রছায়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শতাধিকের বেশি জুয়াচক্র বা ক্যাসিনো চলছে। কেন্দ্রীয় ও মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের একশ্রেণির নেতা এ ব্যবসায় জড়িত। অবৈধভাবে চালানো এসব জুয়ার আসরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ছয় নেতা মাঝেমধ্যে অংশগ্রহণ করেন। ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য নেপাল, থাইল্যান্ডসহ চারটি দেশ থেকে প্রশিক্ষিত নারীদের আনা হচ্ছে। প্রশিক্ষিত জুয়াড়ির পাশাপাশি নিরাপত্তা প্রহরীও আনা হচ্ছে বিদেশ থেকে। ক্যাসিনোগুলোতে প্রতি রাতেই কোটি কোটি টাকা উড়ছে।
জানা গেছে, রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আটটি স্থানে যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের এক শীর্ষ নেতার তত্ত্বাবধানে ক্যাসিনো ব্যবসা চলছে। এক্ষেত্রে কয়েকটি বহুতল ভবনের ছাদ দখলে নিয়ে ক্যাসিনো চালানো হচ্ছে। এখানেই মূলত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ছয় নেতাসহ অনেকের আনাগোনা রয়েছে। রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় তিনটি ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্পোর্টিং ক্লাব, অভিজাত এলাকার ক্লাব ও বিভিন্ন বাসাবাড়িতে রাত গভীর হলেই বসছে কোটি কোটি টাকার জুয়ার আসর। মতিঝিলের ক্লাবপাড়া ছাড়াও দিলকুশা, ব্যাংক কলোনি, আরামবাগ, ফকিরেরপুল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, গুলিস্তান, ওসমানী উদ্যান, বঙ্গবাজার এলাকায় নিয়মিত জুয়ার আসর বসে। মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় অবস্থিত ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে অনানুষ্ঠানিক ক্যাসিনো ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই অভিযোগ রয়েছে গুলশান লিংক রোডের ফু-ওয়াং ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, নিউমার্কেট এলাকার এজাজ ক্লাব, কলাবাগান ক্লাব, পল্টনের জামাল টাওয়ারের ১৪ তলাসহ বেশ কয়েকটি নামিদামি রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা-মতিঝিল-আরামবাগে খেলাধুলা চর্চার জন্য গড়ে ওঠা নামিদামি ক্লাবগুলো বাস্তবে পরিণত হয়েছে ক্যাসিনোয়। ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোও জুয়ার বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। গভীর রাতে ক্লাবগুলোতে আসতে শুরু করে বিত্তবানদের গাড়ি। তাদের সঙ্গে থাকে ঢাকাই সিনেমার উঠতি নায়িকা থেকে শুরু করে নামিদামি মডেল। এসব মডেল-অভিনেত্রী জুয়ার আস্তানায় ‘এস্কর্ট গার্ল’ হিসেবে পরিচিত।
সূত্র জানায়, যুবলীগের একশ্রেণির নেতার ছত্রছায়ায় এ সর্বগ্রাসী জুয়ার আস্তানা এখন ছড়িয়ে পড়ছে আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে রাজধানীর অলি-গলিতেও। ক্লাবের বাইরে বিভিন্ন এলাকার গেস্ট হাউজ ও ফ্ল্যাট বাসায়ও এ ধরনের আয়োজন করা হচ্ছে। বাদ পড়ছে না বস্তি এলাকাও। নিকেতন, নিকুঞ্জ, উত্তরা, রূপনগর, খিলগাঁও, লালবাগ, হাজারীবাগ, বাড্ডার অসংখ্য বাসায় নিয়মিত জুয়ার আসর বসানো হয়। এসব আসরে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে ছিনতাইকারী, ছিঁচকে চোর, পকেটমার, মলমপার্টির সদস্যরাও অংশ নেয়। যুবলীগের নেতারা জড়িত থাকায় পুলিশ জুয়া খেলায় সরাসরি মদত দিতে বাধ্য হচ্ছে।
সচেতন মহল বলছে, বাংলাদেশের আইনে এ ধরনের জুয়ার আসরের কোনো অনুমোদন নেই। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের প্রভাব ব্যবহার করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকরর্মীরা রাজধানীকে মদ জুয়ার আড্ডা খানা তৈরি করেছে।