অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
এদেশে এক সময় সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের তালিকায় ছিলেন আলেম সমাজ। আলেম ওলামাদেরকে মানুষ শুধু সম্মানই করতেন না, তাদেরকে প্রচণ্ড ভয়ও করতেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও ইসলাম বিদ্বেষীরা বেশি ভয় পেতো। ভয়ের মূল কারণ ছিল, আলেম ওলামাদের প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ভক্তি ছিল খুব বেশি। তারা সামাজিক বা ধর্মীয় যেকোনো ইস্যুতে ডাক দিলেই মানুষ পঙ্গু পালের মতো বেরিয়ে আসতো। কিন্তু এখন আর এদেশে সেই দৃশ্য দেখা যায় না। ঘটনা এখন সম্পূর্ণ বিপরীত। আলেম ওলামারা এখন শুধু রাজনৈতি অঙ্গন আর টেলিভিশন টকশোতেই নয়, সাধারণ মানুষেরও হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে।
বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী ও তার কিছু অনুসারীদের কর্মকাণ্ড এদেশের মানুষকে অবাক করেছে। এদেশের মানুষ কখনো কল্পনা করেনি যে আল্লামা শফীরা ক্ষমতাসীনদের কাছে বিক্রি হয়ে যাবেন।
মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জে একটি মাহফিলে আল্লামা শফী বলেছেন, খালেদা জিয়া আলেমদেরকে কিছুই দেয়নি। দাওরায়ে হাদীসকে এমএ’র মান দিয়ে শেখ হাসিনা আলেমদেরকে অনেক সম্মানিত করেছেন।
তার এ বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই এনিয়ে দেশব্যাপী তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
দেখায় যায়, আল্লামা শফী যে অভিযোগ তুলেছেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কারণ, ২০০৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সের মান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ২০ ডিসেম্বর এনিয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী হায়েনাদের সৃষ্ট নৈরাজ্যের কারণে জোট সরকার আর সেটা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেনি। তবে, প্রথম উদ্যোগটাই গ্রহণ করেছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার।
অথচ, আল্লামা শফী আজ বিএনপি-জামায়াত সরকারের সেই অবদানের কথাটা বেমালুম ভুলে গেলেন। তার এই ভুলে যাওয়ার কারণটাও জনগণের কাছে পরিষ্কার।
শেখ হাসিনা দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সের মান দিয়েছেন ঠিক। সেটা কি কওমী আলেমদেরকে সম্মানের জন্য দিয়েছেন? মোটেও না। এর পেছনের ইতিহাসটাও সবার জানা।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক হত্যাকাণ্ড গুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, সবচেয়ে ভয়াবহ, নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত, নৃশংস ও নির্মম হত্যাকাণ্ড হলো ২০১৩ সালের ৫ মে’র মতিঝিলের শাপলাচত্ত্বরে হেফাজত নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের পেটুয়া বাহিনীর নির্মম হামলা। এই গণহত্যার কোনো সংবাদ দেশের মিডিয়াগুলো প্রকাশ করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো বলছে সরকারি বাহিনী এখানে গণহত্যা চালিয়েছে। শেখ হাসিনার এই নির্মমতায় আন্তর্জাতিক বিশ্ব পর্যন্ত বিস্মিত হয়েছে।
শাপলা চত্ত্বরের ঘটনায় শেখ হাসিনার ওপর যখন দেশবাসী ক্ষুব্ধ। এদেশের আলেম সমাজ ক্ষুব্ধ। তখন শাপলা চত্ত্বরে নিহত আলেম ও হাফেজদের রক্তের ওপর দিয়ে গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার মেহমানদারী গ্রহণ করলেন হেফাজতের আমির আল্লামা শফী। অনেকেই বলছেন, গণভবনে বসে বিরিয়ানি খেয়ে তিনি শেখ হাসিনার উচ্চ প্রশংসা করে আসলেন। আর শাপলা চত্ত্বরের সেই রক্তের কথা ভুলনোর জন্য চতুর শেখ হাসিনা তড়িগড়ি করে কওমীর দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা দেন। এ মান পেয়ে সব কিছু ভুলে গিয়ে খুশিতে গণভবন থেকে বাসায় যান আল্লামা শফী।
অনেকেই বলছেন, কিছু দিন পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল শোকরানা সমাবেশ করে শেখ হাসিনাকে কওমী জননীও উপাধি দেন তারা। এরপর থেকে সব সময়ই শেখ হাসিনার উচ্চ প্রশংসা করে যাচ্ছেন আল্লামা শফী।
গণভবনে বিরিয়ানী খেয়ে শুধু খালেদা জিয়ার অবদানের কথাই নয়, শাপলা চত্ত্বরের রক্তের কথাও ভুলে গেছেন আল্লামা শফী।