অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশেও শুক্রবার গুম হওয়া লোকজনের পরিবারের সদস্যরা একটি সভা করেছে। সভায় বিশিষ্টজনেরা বর্তমান সরকারের আমলে গুম-খুনের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। গুম হওয়া বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে দিতে তারা সরকারের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।
গুমের তালিকায় আসছে নতুন নতুন নাম। কেউ হারাচ্ছেন বাবাকে, আবার কেউবা হারাচ্ছেন তার আদরের সন্তানকে। বাংলাদেশের অধিকার সংগঠনগুলোর বরাত দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস এ তথ্য মতে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গুমের শিকার হয়েছেন ৫০৭ জন।
সারাদেশে যখন গুম হওয়া পরিবারের মায়েদের কান্নার আহাজারি চলছে ঠিক তখন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোন গুমের ঘটনা ঘটেনি। এমনকি খুন-গুমের সকল দায়ভার তিনি বিরোধী দলের ওপর চাপাচ্ছেন। অথচ ইতিহাস বলছে-এদেশে খুন-গুমের রাজনীতি শুরু করেছিলেন শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিব। খুন-গুমের মাধ্যমে বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য মুজিব বাহিনী নামে একটি সন্ত্রাসী-গলাকাটা বাহিনীও ওই সময় গঠন হয়েছিল। তারা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিরোধী মতের লোকজনকে ধরে এনে জবাই করে হত্যা করেছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে আওয়ামী লীগ। এদেশের মানুষ কখনো ভুলতে পারবে না সেই মুজিব বাহিনী আর রক্ষীবাহিনীর হত্যা, নির্যাতন ও সীমাহীন অত্যাচারের কথা। আওয়ামী লীগের সেই ইতিহাস ছিল এক কালো ইতিহাস। মানুষ হত্যার ইতিহাস। মুখ দিয়ে মানবতার কথা বলা আর হাত দিয়ে মানুষ হত্যা করা ছিল আওয়ামী লীগের মূলনীতি। বিনা অপরাধে হত্যা করা হয়েছে শত শত আলেম-ওলামা আর হাজার হাজার নারী-পুরুষকে। মুজিববাহিনীর অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। নির্যাতিত মানুষের আর্তচিৎকারের সেই ধ্বনি যেন এখনো আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতনের এই ইতিহাস নতুন করে কিছু বলার নেই।
স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের আমলের খুন-গুম নিয়ে আহমদ মূসার লেখা ‘স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের সূচনা পর্ব: ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ’’ নামক বই থেকে পাঠকদের অবগতির জন্য এখানে মাত্র তিনটি ঘটনার উল্লেখ করা হলো।
এক. কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার ইকোরটিয়াই মুজিব বাহিনীর হাতে নিহত আববাস উদ্দিনের ভাই সামসুদ্দিন বলেছেন, ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে শাহজাহান, আজিজ ও বাচ্চুর নেতৃত্বে একদল মুজিব বাহিনীর লোক এসে আমার মায়ের সামনে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করল। ওরা যাওয়ার সময় বলে গেছে ওর লাশ শৃগাল কুকুরে খাবে, কেউ কবর দিলে তাকেও হত্যা করা হবে। কেউ কাঁদলে তাকেও হত্যা করা হবে। সকালে মেরে ওরা আবার বিকালে এসে দেখে গেছে লাশ কেউ কবর দিয়েছে কি না। কেউ কান্নাকাটি করছে কি না। পরে রাতের আঁধারে গ্রামবাসী বিলে নিয়ে লাশটি পুঁতে রাখে। এই হলো আওয়ামী লীগের মানবাধিকার রক্ষার শ্লোগানের বাস্তব চিত্র।
দুই. একই এলাকায় মুজিব বাহিনীর নির্মম বুলেটের আঘাতে নিহত হয় রশিদ। রশিদের বাবা আব্দুল আলী বললেন, ওরা আমার কাছে এক হাজার টাকা চাঁদা চাইছিল। আমি গরীব মানুষ। টাকা দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। কিছুদিন পর শাহজাহানের নেতৃত্বে একদল লোক এসে আমার সামনে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে। আমার হাতে কুঠার দিয়ে বলল মাথা কেটে দে, ফুটবল খেলব। আমি কি তা করতে পারি? আমি যে তার বাপ। অত্যাচার আর কতক্ষণ সহ্য করা যায়? সহ্য করতে না পেরে অবশেষে নিজ হাতে ছেলের মাথা কেটে দিলাম। আমার ছেলে আওয়ামী লীগ করত না। এটাই ছিল তার অপরাধ। প্রিয় পাঠক, পৃথিবীর ইতিহাসে এর চেয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আর কী হতে পারে? ওরা হত্যা করে আবার বাবাকে বাধ্য করেছে ছেলের মাথা কেটে দিতে। ওরা কি মানুষ ছিল?
তিন. ভেড়ামারার কামালপুর কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক ফজিলাতুন্নেসাকে গুলি করে হত্যা করে মুজিববাহিনীর লোকেরা। নিহতের ভাই ফিরোজ আহসান বললেন, তারা আমার বোনকে হত্যা করে আমাদের কাউকে লাশটি দাফন করতে দেয়নি। আমার বাড়িতে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের একটি মিটিং হয়েছিল। এটাই আমার বোনের অপরাধ।
এছাড়া, সিরাজ শিকদারকে কারা গুলি করে হত্যা করেছে? শেখ মুজিবের গুন্ডা বাহিনীই সিরাজ শিকদারকে হত্যা করেছি। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডের পর শেখ মুজিব দাম্ভিকতার সঙ্গে বলেছিল-কোথায় আজ সিরাজ শিকদার?
এরপর, চিত্র নাট্যকার জহির রায়হানকেও গুম করা হয়েছিল শেখ মুজিবের নির্দেশেই। কারণ, তার কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে আ.লীগ নেতাদের বহু কুকর্মের প্রামাণ্য চিত্র ছিল। এসব প্রকাশ হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে জহির রায়হানকে তারা গুম করেছিল।
কিন্তু, সেই গুম-খুনের নায়ক শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা আজ বড় গলায় বলছেন যে, তার বাবার আমলে দেশে কোনো গুম-খুনের ঘটনা ঘটেনি। যা রীতিমত হাস্যকর।
আরও পড়ুন: ছেলের মাথা কাটতে বাবাকে বাধ্য করেছিল মুজিব বাহিনী!