অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ভারতে ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর সরকার গঠন করেছেন নরেন্দ্র মোদি। তার মন্ত্রিসভায় এবার বেশ কিছু নতুন মুখ এসেছে। নতুনদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহও। আর তাকে দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। অন্যদের নিয়ে খুব বেশি একটা আলোচনা না হলেও নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিয়ে ইতিমধ্যে ভারতজুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশটিতে বসবাসকারী মুসলিমরা। কারণ, চরম মুসলিম বিদ্বেষী অমিত শাহ ভারতের রাজনীতিতে একজন গডফাদার হিসেবেও পরিচিত। তিনি সুপ্রিম কোর্ট ঘোষিত একজন দাগী আসামি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।
অমিত শাহ এক সময় দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় তিনি বিচারবহির্ভূতভাবে মানুষকে হত্যা করেছেন। এছাড়া কথিত সন্ত্রাসবাদের মিথ্যা অভিযোগ তুলে ২০১০ সালে সোহরাব উদ্দিন শেখ ও তার স্ত্রী ইশরাত জাহানকে হত্যা করেছিল অমিত শাহ।
লোকসভা নির্বাচনের আগ থেকেই মুসলিম নিধন ও তাড়ানোর মিশন নিয়ে মাঠে নামেন অমিত শাহ। ভারতের জাতীয় নাগরিক তালিকা(এনআরসি) ও নাগরিকত্ব সংশোধন নিয়ে ফের আলোচনায় আসেন তিনি। দেশটির সত্যিকার নাগরিকদের পরিচয় বের করার নামে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসা মুসলমানদেরকে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গেও তারা এটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে, মমতা ব্যানার্জি বিজেপির এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভুমিকা পালন করছেন।
অমিত শাহর ভাষায় আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মুসলমানরা হলো অবৈধ বাংলাদেশি। নির্বাচনের সময় একাধিক জনসভায় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তার দল বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারলে বাঙ্গালী মুসলমানদের ধরে ধরে দেশ থেকে বের দেবো। কোনো অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমান ভারতে থাকতে পারবে না।
এখন একটি প্রশ্ন হলো- অমিত শাহতো নরেন্দ্র মোদির অধীনে একজন মন্ত্রী। তিনি চাইলেই কি সব কিছু করতে পারবেন? অমিত শাহ চাইলেও কি মুসলমানদেরকে ভারত থেকে বের করে দিতে পারবেন?
এ প্রশ্নের জবাব হলো- ভারতে দল ও সরকার পরিচালনার পদ্ধতিটা বাংলাদেশের মতো নয়। দেশটিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রধানরা সাধারণত কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন না। তার দল পরিচালনা করেন। বিগত ১৫ বছরের মধ্যে অমিত শাহই এই রকের্ড ভেঙ্গে মন্ত্রী হলেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিলেও মোদির চেয়ে অমিত শাহের ক্ষমতা অনেক বেশি। কারণ, তিনি হলেন দলীয় প্রধান। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই সরকার পরিচারিত হয়। দল না চাইলে মোদিও প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না।
ভারতের মুসলমানরা বলছেন, একজন গডফাদার এবং চরম মুসলিম বিদ্বেষী অমিত শাহকে একটি বিশেষ টার্গেট নিয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছে বিজেপি। তাদের উদ্দেশ্য হলো কথিত নাগরিক তালিকার নামে মুসলমানদের বের করে দিয়ে ভারতকে একটি কট্টরপন্থী হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা।
অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দেশটির মুসলমানরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, যেসব মুসলিমরা প্রকৃতি নাগিরক তাদের ওপরও গরু জবাইসহ বিভিন্ন অজুহাতে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাবে বিজেপি। যাতে মুসিলমরা নিজ থেকেই ভারত ছেড়ে চলে যায়।