অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ইদানিং দেশে চলমান স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ও কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনে নামার হুমকি ধামকি দিচ্ছেন কথিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন, আ স ম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না। ড. কামাল প্রায় প্রতিদিনই বলছেন- কঠোর ও দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই অগণতান্ত্রিক সরকারকে বিদায় করা হবে। জনগণ রাস্তায় নেমে এলে সরকারের লোকজন পালিয়ে যাওয়ার পথ পাবে না। কামাল, রব ও মান্নাদের এসব বক্তব্যের পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিএনপি নেতারা। মির্জা ফখরুলসহ দলটির বেশ কয়েকজন নেতা মনে করছেন- কামালের মাধ্যমেই তাদের নেত্রীর মুক্তি হবে। তাই, মাঝে মধ্যে মির্জা ফখরুলও কামালের আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন হলো- নামস্বর্বস্ব পার্টির নেতা ড. কামাল, আ স ম রব ও মাহমুদুর মান্নার নেতৃত্বে কি আসলেই দেশে সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে? তারা কি আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারবে? তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে কি এদেশের মানুষ সরকার পতনের আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসবে? তারপর তারা সত্যিকার অর্থেই সরকার বিরোধী আন্দোলনে নামবেন নাকি শুধু অভিনয় করে যাচ্ছেন?
এখন যদি এসব প্রশ্নে উত্তর খোঁজ হয় তাহলে একটির জবাবেও হ্যাঁ বোধক উত্তর আসবে না।
কারণ, দেখা যায় অতীতে সরকার বা স্বৈরাচার বিরোধী ৩টি আন্দোলন হয়েছে। প্রথমটি ছিল স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন। যে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন এরশাদ। ৯০ এর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল দেশের সকল রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ, বিএনিপ, জামায়াতসহ অন্যান্য ছোট ছোট সবগুলো দল ঐক্যবদ্ধভাবে সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল। সকল রাজনৈতিক দল এক ফ্লাট ফরমে থাকায় জনগণও তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল।
দ্বিতীয় আন্দোলন ছিল ৯৬ সালে খালেদা জিয়ার একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন। ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন করেও খালেদা জিয়া ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেন নি। প্রথমে সরকার গঠনে বিএনপিকে জামায়াত সমর্থন দিলেও পরে রাজপথের সরকার বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে জামায়াত। আওয়ামী লীগ যেমন বড় দল হিসেবে একটা বড় শক্তি, তেমনি সাংগঠনিকভাবে জামায়াতও ছিল একটা বড় শক্তি। তারা আন্দোলন সফলের জন্য অন্য কাউকে ভাড়া করতে হয়নি। এছাড়া, তাদের সঙ্গে এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য ছোট দলগুলো ছিল। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টিসহ একট বড় ঐক্যবদ্ধ শক্তি ছিল। হরতাল-অবরোধ বাস্তবায়ন করার জন্য তাদের লোকের অভাব ছিল না। আর তখন তাদের আন্দোলনের মূল টার্গেট ছিল সরকারের পতন। আন্দোলনে এসে কেউ হালুয়া রুটির জন্য জোট ছাড়েনি। তাদের স্বতস্ফূর্ত আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
তৃতীয় আন্দোলন ছিল ২০০০-০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন। ওই সময় সরকার থেকে টাকা খেয়ে এরশাদ চলে গেলেও বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোটসহ ৩টি বড় শক্তি ছিল। রাজপথের আন্দোলনের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র পাহাড়ায়ও শক্ত অবস্থানে ছিল চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ শত চেষ্টা করেও নির্বাচনে কাঙ্খিত ফলাফল পায়নি।
এখন যদি ড. কামাল, রব ও মান্নার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হিসাব মিলানো হয় তাহলে দেখা যাবে, রাজনীতিতে তারা একেবারেই পরগাছা। তারা এমন ৩ দলের তিন নেতা যে দলের মিছিলে ব্যানার ধরার লোক খোঁজে পাওয়া যায়না। তাদের নেতৃত্বে সরকার পতনের আন্দোলন! তারাতো ভোট ডাকাতিই বন্ধ করতে পারেনি।
এছাড়া, আস্থা-বিশ্বাসের একটা বিষয় আছে। বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের তাদের প্রতি কোনো আস্থা নেই। কারণ, তারা ৩ জনই আওয়ামী লীগের পুরনো লোক। এবং তারা বঙ্গবন্ধুরও খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। শেখ হাসিনার পতনের জন্য তারা রাজপথে আন্দোলন করবে এটা মানুষ কখনো বিশ্বাস করে না। আর কর্নেল অলি আহমদতো প্রকাশ্যেই বলেছেন, সরকার থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা মোটা অংকের টাকা খেয়েছে। এছাড়া ড. কামালের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এখন প্রমাণিত হচ্ছে যে, তিনি আসলে সরকারের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন।
সচেতন মানুষ মনে করেন, ড. কামাল, রব ও মান্নাদের নেতৃত্বে এদেশে সরকার বিরোধী কোনো আন্দোলন সফল হবে না। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে জনগণ কখনো মাঠে নামবে না। এরপরও বিএনপি নেতারা যদি মনে করেন যে, কামালদের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে তাহলে সেটা তাদের চরম অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়।