অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও পকেটে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোসহ আরও নানা অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে, এবার পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে যা অন্য সব অভিযোগকে ছাপিয়ে গেছে। এতদিন জানা গেছে, নিরপরাধ মানুষকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে মারধর করে টাকা আদায় করার জন্য। কিন্তু, এবার রিমান্ডে নিয়ে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে বসতবাড়ি লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সঙ্গে ৩টি গাড়িও লিখে নিয়েছে।
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হকের স্ত্রী ফারজানা মোজাম্মেল, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রামনা জোনাল টিমের সদস্য দীপক কুমার দাস ও নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনিরসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম কোর্টে বসতবাড়িসহ ৬২ শতাংশ জমি ও ৩টি গাড়ি লিখে নেয়ার অভিযোগ করে মামলা করেছেন ডেমরার আব্দুল মতিনের স্ত্রী আফরোজা আক্তার আখি। গত ৩ এপ্রিল এই মামলা করেন তিনি।
ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী সাক্ষীদের জবানবন্দি নিতে বিচারক নির্ধারণের জন্য মঙ্গলবার মামলার নথি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জাহিদুল কবিরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘ঘটনা সাজিয়ে’ রাজধানীর শাহবাগ থানার ৪৩ (৭) ১৮ নম্বর মামলা করা হয়। পরে বাদীর স্বামী আব্দুল মতিন, শ্বশুর আলহাজ্জ মো. জাহের আলী ও ননদের জামাই আবু তাহেরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম অদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। বিচারক ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই জাহের আলীকে পাঁচ দিন এবং মতিন ও তাহেরকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন।
ওই দিনই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার দাস তাদের আদালত থেকে রিমান্ডে নিয়ে যায়। পরে ২৬ জুলাই মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সম্পত্তি আত্মসাত করার জন্য বাদীর শ্বশুরকে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় নিয়ে দুটি দলিল রেজিস্ট্রি করে নেয়। যার নম্বর-৫৩৬৭ তারিখ ২৬/০৭/২০১৮ এবং নম্বর ৯২২৬ তারিখ ২৬/০৭/২০১৮। এছাড়া ব্যাংকে বন্ধক রাখা পাওয়ার বাতিল করার জন্য নতুন পাওয়ার দলিল তৈরি করেন, যার নম্বর-৫৩৬৬ তারিখ ২৬/০৭/২০১৮। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই বাদীর স্বামীকে ডিবি পরিচয় দিয়ে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে চারটি দলিল রেজিস্ট্রি করে নেয়। এছাড়া ২০১৮ সালের ১১ জুলাই পুলিশ হেড কোয়ার্টারে মিটিংয়ের কথা বলে নিয়ে বাদীর শ্বশুর ও স্বামীকে চোঁখ বেধে নির্জন স্থানে আটক করে রেখে ৫টি দলিল সম্পাদন করে নেয় আসমিরা।
এছাড়া ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বক্তবড়ী এলাকায় তাদের বসতবাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তাদের গ্যারেজ থেকে তিনটি গাড়ি নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই গাড়ি তিনটি হল- ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৯২৫১, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-২৫২৮ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ-৩৩-৪৬৫২।
রিমান্ডে নিয়ে জমি দখলের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশের ওপর সাধারণ মানুষ শুধু ক্ষুব্ধই হচ্ছে না, তাদের মধ্যে উদ্বেগ আতঙ্কও দেখা দিয়েছে। কারণ, বর্তমানে দেশে সবচেয়ে ক্ষমতাধর হল পুলিশ বাহিনী। পুলিশের শেল্টারে যেহেতু সরকার টিকে আছে তাই তাদের কাছে এখন সরকারও ধরা। পুলিশ সদস্যরা এখন যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। সীমাহীন অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। রাষ্ট্রের নাগরিকদের জান মালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনী এখন জনগণের কাছে মহাআতঙ্ক।
সরকার পুলিশ বাহিনীকে জনগনের সেবক দাবি করলেও বাস্তবে দেখা গেছে, অপরাধী আর পুলিশ একসঙ্গেই মিলেমিশে বসবাস করছে। চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী ও মাদকাসক্তদের চেয়ে পুলিশকে মানুষ এখন বেশি ভয় করে। মানুষ বিপদে পড়লেও এখন আর পুলিশের কাছে যেতে চায় না।