অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাদের ভাষায়- দেশ এখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতি সপ্তাহে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০-১০০ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন। শেখ হাসিনার নামে করা উন্নয়নের সাইনবোর্ড লাগানো নেই এমন এলাকা এখন বাংলাদেশে কমই আছে। তার দাবি-তিনি মানুষকে উন্নত জীবন দিয়েছেন। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিদ্যুৎ দিয়েছেন, গ্যাস দিয়েছেন, ঘরবাড়ি করে দিয়েছেন, গরু-ছাগল, হাস-মুরগি দিয়েছেন, গ্রামের মহিলাদের হাতে মোবাইল দিয়েছেন, ইন্টারনেট দিয়েছেন, গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্যসেবাসহ আরও অনেক কিছু তিনি করে দিয়েছেন। এ সবই নাকি ছিল তার বাবার স্বপ্ন।
দেশের মানুষও এখন সরকারের এত সেবা পেয়ে সারাদিন খুশিতে ঠেলায় ঘুরে বেড়ায়। সমস্যা হলো বেড়াতে গিয়ে মানুষ আর নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারে না। আবার অনেকে নিরাপত্তহীনতার কারণে বাইরে যেতেও ভয় পায়। দেখা গেছে, দেশে এখন প্রতিদিন খুন, হত্যা, ধর্ষণ, যৌনহয়রানি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাদাবাজি, গুম, অপহরণসহ সামাজিক অপরাধ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েরা বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যদিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতে হয়। প্রায় দিনই বখাটে ছেলেদের কর্তৃক যৌণ হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। জীবনের ভয়ে প্রতিবাদও করা করতে পারে না তারা। প্রতিবাদ করলেই ছুরিকাঘাত কিংবা এসিড ছুড়ে হত্যা করা হচ্ছে। শুধু বখাটে ছেলেই নয়, শিক্ষকদের দ্বারাও এখন ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে মেয়েরা।
সর্বশেষ উদাহরণ হলো-ফেনীর মাদরাসা অধ্যক্ষের রোষানলের শিকার হয়ে মারা যাওয়া নুসরাত। বলা যায়, দেশে এখন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের এখন কোথাও নিরাপত্তা নেই। এমনকি বর্তমানে নিজেদের বাসার ভেতরও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে মেয়েরা। প্রায় দিনই দেখা যাচ্ছে, প্রভাবশালী কিংবা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা দলবল নিয়ে ঘরে ঢুকে মাকে বেধে মেয়েকে ধর্ষণ করছে কিংবা মেয়েকে বেঁধে মাকে ধর্ষণ করছে। এছাড়া প্রতিবাদ করতে গিয়ে আবার ছুরিকাঘাত বা হত্যার শিকারও হচ্ছে অনেকে।
এছাড়া, দেশে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পোশাক কারখানায় ও অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবি মেয়েরাও। বিশেষ করে নারী পোশাক শ্রমিকরা প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হচ্ছে। এক কথায় বলা যায়-বর্তমানে দেশের নারী সমাজ এখন চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবন যাপন করছে। ঘর থেকে বেরিয়ে আবার যে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বাসায় ফিরতে পারবে সেই গ্যারান্টি এখন নেই।
এরপর, দেশে এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি। এখন আর রাতে নয়, দিনের বেলাতেই রিক্শা, সিএনজি থামিয়ে ও পথচারীদের গতিরোধ করে সব কিছু লুটে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। প্রতিবাদ করলেই ছুরিকাঘাত। আর রাতের বেলা নেমে আসে এক ভয়াবহ আতঙ্ক। এর সঙ্গে চোর-ডাকাতদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে মানুষের বাসা বাড়িও। বলা যায়-ঘরে বাইরে সবখানেই মানুষ এখন নিরাপত্তাহীন।
দেশে এখন আরেক ভয়াবহ আতঙ্কের নাম হচ্ছে গুম-অপহরণ। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে অপহরণের ঘটনা। নিখোঁজ হওয়া মানেই লাশ হয়ে ফিরে আসা। বিশেষ করে দেশে এখন শিশু ও স্কুল-কলেজে পড়ুয়া কিশোররা বেশি অপহরণের শিকার হচ্ছে। গত সপ্তাহে ফেনী ও চলতি সপ্তাহে ঢাকার ডেমরায় দুইটি স্কুল পড়ুয়া শিশু নিখোঁজ হওয়ার পর পাওয়া গেল তাদের লাশ। এমন ঘটনা এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই ঘটছে। ছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে মানুষ এখন চরম আতঙ্কে আছে।
এসব সামজিক অপরাধের সঙ্গে আছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নিপীড়ন, নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও মানুষের জমি দখলের ঘটনা।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, জনগণের জান-মালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে সরকার বিরোধীদল দমনের কাজে ব্যস্ত রাখায় সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। জনগণের নিরাপত্তার চেয়ে সরকার বিরোধীদল দমনের প্রতিই বেশি মনোযোগী। সরকার দেশের এমনই উন্নয়ন করেছে যে, একজন নাগরিকের এখন আর স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই।