অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
পুরান ঢাকার চকবাজার, বনানীর এফ আর টাওয়ার ও গুলশান-১ নম্বরের ডিএনসিসি মার্কেটের ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের অক্ষমতা এবং এসব আগুনে হতাহত ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় সরকারের ভূমিকা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাগুলো এসব আগুন লাগার ভিতর দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। যদিও সরকার এখন এসব আগুনের পেছনে নাশকতা খোঁজার চেষ্টা করছে। তবে, গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের আগুন যে আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ী নেতারাই লাগিয়েছে এতে কারো মনে কোনো ধরণের সন্দেহ নেই।
এসব আগুনের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে এবার অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং অগ্নি দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই নির্দেশনাগুলো হলো-
# বহুতল ভবন তৈরির সময় ফায়ার সার্ভিসের ক্লিয়ারেন্সের পাশাপাশি সেটা ‘ভায়াবল’ কি না নিশ্চিত করা। # অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা। ফায়ার সার্ভিসের যে অনুমোদন দেওয়া হয় কারখানার মত তা প্রতি বছর নবায়নের ব্যবস্থা করা। # বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা। # এক থেকে তিন মাসের মধ্যে অগ্নি নির্বাপন মহড়া করা। # অগ্নিকা-ের সময় ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু এড়াতে ভবনে ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি অবলম্বন। # পানির অভাবে অনেক সময় ফায়ার সার্ভিস কাজ করতে পারে না; তাই যেখানে যেখানে সম্ভব জলাশয় বা জলাধার তৈরি করা। # লেকগুলো সংরক্ষণ করা। # বহুতল ভবনে ওঠার জন্য ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডারের সংখ্যা বাড়ানো। # প্রকৌশলীরা যেন পরিবেশ ও বাস্তবতার নিরেখে অবকাঠামোর নকশা করেন, তা নিশ্চিত করা। # প্রতিটি ভবনে ফায়ার এক্সিট নিশ্চিত করা। # অনেক জায়গায় ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে দরজা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফায়ার এক্সিট যেন সব সময় ওপেন থাকে, অর্থাৎ ম্যানুয়ালি যেন তা খোলা যায়। # জরুরি প্রয়োজনে মানুষ যেন বহুতল ভবন থেকে তারপুলিনের মাধ্যমে ঝুলে নামতে পারে, সেই পদ্ধতি চালু করা। # প্রতিটি হাসপাতাল ও স্কুলে বারান্দাসহ খোলা জায়গা রাখা। # ভবনে আগুন লাগগে লিফট ব্যবহার না করা। # প্রতিটি ভবনে কমপক্ষে দুটি এক্সিটওয়ে রাখা।
রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হিসেবে শেখ হাসিনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো-শেখ হাসিনার দেয়া এসব নির্দেশনা মানে কে? কারণ, গত বছর নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভে যখন সারাদেশ অচল হয়ে পড়ে তখন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে বুঝানোর জন্য সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শেখ হাসিনা কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দেয়া নির্দেশনাগুলো ছিল-
* গাড়ির চালক ও তার সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। * লং ড্রাইভের সময় বিকল্প চালক রাখা, যাতে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কোনো চালককে একটানা দূরপাল্লায় গাড়ি চালাতে না হয়। * নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার তৈরি। * অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা। * সড়কে যাতে সবাই সিগন্যাল মেনে চলে- তা নিশ্চিত করা। পথচারী পারাপারে জেব্রাক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করা। * চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
কিন্তু সড়কের দিকে তাকালে দেখা যায়, আজ পর্যন্ত শেখ হাসিনার দেয়া ৬টি নির্দেশনার একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। গাড়ির চালক হেলপাররাতো দূরের কথা শেখ হাসিনার মন্ত্রী এবং তার দলের নেতারাই এসব নির্দেশনা মানছে না। কারণ, বর্তমান পরিবহন শ্রমিক নেতা সবই তার দলের লোক। আর প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ প্রশাসনও এখন পর্যন্ত বাস্তবসম্মত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বলা যায়-সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ৬ দফা নির্দেশনা শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। যার কারণে, সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ না হয়ে দিন দিন আরও বাড়ছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, অগ্নিকা- নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন তা কখনো বাস্তবায়ন হবে না। কয়েকটি ভয়াবহ আগুনের ঘটনার কারণে হয়তো এখন একটু তোড়জোর দেখা যাবে। একমাস পরই আবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব নির্দেশনার কথা ভুলে যাবে। সড়কের মতোই এসব নির্দেশনার ফাইল বন্দি হয়ে থাকবে। বাস্তবায়ন কখনো হবে না।