অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
২ কোটি টাকার কথিত দুর্নীতির মামলায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত একটি জায়গায় বন্দি আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সরকার তাকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি মাসের শেষের দিকে কিংবা আগামী মাসের প্রথম দিকে তাকে ওইখানে নেয়া হতে পারে।
বয়স এবং নির্জন পরিত্যক্ত একটি ভবনে একাকিত্ব জীবন যাপনের কারণে খালেদা জিয়া এখন একাধিক রোগে আক্রান্ত। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য মতে, তিনি এখন হুইলচেয়ারেও বেশি সময় বসে থাকতে পারেন না। তার হাত, পা, চোখ এখন নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে। গত এক বছর ধরে উন্নত চিকিৎসার দাবি করে আসলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। উন্নত চিকিৎসার অভাবে তিনি দিন দিন নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন। বলা যায়, তার শরীরের সার্বিক অবস্থা এখন চরম অবনতির দিকে। তিনি যেকোনো সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষও মনে করছেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করছেন সবই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে। শেখ হাসিনার মূল উদ্দেশ্যই হলো খালেদা জিয়াকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়া। এজন্য তিনি অসুস্থ খালেদা জিয়ার জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন না।
এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে না এটা সবারই জানা। আর উচ্চ আদালত এখন আওয়ামী লীগের শাখা অফিস হিসেবেই পরিচিত। খালেদা জিয়াকে সব মামলায় জামিন দিয়ে মুক্তি দেয়ার ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের নেই। কারণ, সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। প্রশ্ন হলো-খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তার দল কি করছে? বিএনপি নেতারা কি আসলেই খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়? বিএনপি নেতারা যে প্রক্রিয়ায় এগুচ্ছে খালেদা জিয়াকে কি তারা জীবিত অবস্থায় মুক্ত করতে পারবে? এসব প্রশ্ন এখন রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষের মনে।
আর এসব প্রশ্ন তোলার যুক্তিসংগত কারণও আছে। কথিত দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর বিএনপি নেতারা ঘোষণা দিলেন যে তারা সরকারের উসকানিতে পা দেবেন না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে তারা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, খালেদা জিয়ার মুক্তিতো দূরের কথা উন্নত চিকিৎসার জন্যও তারা সরকারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যেকোনো আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এমন কি সরকার পতনের আন্দোলনের জন্যও তারা প্রস্তুত। কিন্তু, দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা রহস্যজনক কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কোনো কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা দিচ্ছে না। এখন দিন যত যাচ্ছে এনিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর ততই ক্ষুব্ধ হচ্ছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ মনে করছেন, বিএনপির বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে জীবিত অবস্থায় খালেদা জিয়ার মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সরকার যা চাচ্ছে তাই হবে। হয়তো একদিন শোনা যাবে, খালেদা জিয়া আর নাই। সেদিন মির্জা ফখরুলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে খালেদা জিয়ার লাশ গ্রহণের জন্য কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে যাবেন। আর সাথে কিছু নেতাকর্মী থাকবে যারা স্লোগান দিবে যে, আমরা এর কঠিন প্রতিশোধ নেব। এর বেশি আর কিছু হবে না।