ভারতীয় বিমানবাহিনীর সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব কন্ট্রোল) লঙ্ঘন করে পাকিস্তানে ঢুকেছিলেন। পাল্টা জবাব দিয়েছেন পাকিস্তানের বিমান সেনাসদস্যরাও। ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতের বিমানবাহিনীর হামলায় ৩০০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে—মঙ্গলবার ভারতের এমন দাবির পরই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়েছে।
ডনের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর টুইটারে দাবি করেছেন, পাকিস্তানের সেনাদের পাল্টা জবাবে ফিরে গেছে ভারতীয় যুদ্ধবিমান। তিনি টুইটে লেখেন, ‘ভারতীয় বিমানবাহিনীর সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিলেন। পাল্টা জবাব দিয়েছেন পাকিস্তানি বিমান সেনাসদস্যরাও। ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে বাধ্য করা হয়েছে ফিরে যেতে।’ তিনি আরও জানান, ‘মুজাফফরাবাদের দিক থেকে পাকিস্তানে ঢোকে ভারতীয় যুদ্ধবিমান। ’
পরবর্তী সময় আরও এক টুইটে আসিফ গফুর জানান, সময়মতো উপযুক্ত সাড়া দিয়েছে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী। ফলে পাকিস্তানি বাহিনীর তাড়া খেয়ে পেছন ফিরে পালাতে বাধ্য হয়েছেন ভারতীয় সেনারা।
ভারতীয় বিমানবাহিনী কোনো অবকাঠামোতে হামলা করতে পারেনি এবং এই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনাও ঘটেনি বলে দাবি করেছে পাকিস্তান।
এর আগে টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) ভারতের বিমানবাহিনীর হামলায় ৩০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানের জইশ-ই-মুহাম্মদ, হিজবুল্লাহ মুজাহেদিন ও লস্কর-ই-তাইয়েবার স্থাপনায় এ বিমান হামলা চালানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বিজয় কেশব গোখলে সরকারি এক বিবৃতিতে জানান, নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জয়েশ জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে বিমানবাহিনী। নিহত হয়েছেন জইশ-ই-মুহাম্মদের সিনিয়র কমান্ডাররা।
ভারতীয় বিমানবাহিনী বলছে, তাদের ১২টি মিরেজ ২০০০ জেট বিমান এ হামলায় অংশ নেয় এবং ১ হাজার কেজি বোমা বর্ষণ করে অনেক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তবে পাকিস্তান এ ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি অস্বীকার করেছে। হামলার পর নিজ বাসভবনে নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমনসহ উচ্চপদস্থ মন্ত্রীদের নিয়ে জরুরি নিরাপত্তা বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর ওই বৈঠকের পর বিজয় কেশব গোখলে বিবৃতি দেন বলে আনন্দবাজার অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফ গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ানের মৃত্যু হয়। এর জবাব দিতেই ভারত এ হামলা চালিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের খবরে জানানো হয়, ভারতের বিমান হামলার বিষয়টি টের পাওয়ার পর পাকিস্তানি সেনারা প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। তাদের তরফে পাঠানো হয় এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। কিন্তু ভারতের শক্তি দেখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন পাকিস্তানি সেনারা। কোনো রকম প্রতিরোধের সাহসই তারা দেখাতে পারেননি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের খবরে জানানো হয়, মঙ্গলবার ভোরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর বৈঠকে বসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিরাপত্তাবিষয়ক কেবিনেট কমিটির ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ ভারত সরকারের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা।
ভারতীয় বিমানবাহিনী বলছে, মঙ্গলবার এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হয়। ভোররাত সাড়ে তিনটা নাগাদ পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে পড়ে বিমানসেনার মিরাজ ২০০০ ফাইটার বিমান। বেছে বেছে হামলা চালানো হয় জইশ-ই-মুহাম্মদের জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে। পুলওয়ামার হামলার পর জম্মু-কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর জঙ্গি ঘাঁটিগুলো পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ফলে বেশ খানিকটা ভেতরে ঢুকে হামলা চালানো হয়। বালাকোট খাইবার-পাখতুনওয়ার একটি শহর, যা নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ভেতরে। সেখানেই জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান জঙ্গি শিবির রয়েছে। ফলে সেখানে গিয়েই এই হামলা চালানো হয়। মঙ্গলবার ভোররাতে মুজফ্ফরাবাদ ও চৌকিটিতে জঙ্গি শিবিরে হামলা চালানো হয়েছে। ২১ মিনিট চলেছে এ হামলা।
পাকিস্তান বলছে, হামলা চালানো হয়েছে পাকিস্তানের বালাকোটে। পাকিস্তানি বিমানবাহিনী প্রতিরোধ করেছে। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে তাদের দাবি।
সূত্র: প্রথম আলো