অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্থিরতা ততই বাড়ছে। একদিকে চরম অস্বস্তিতে দিন কাটাচ্ছেন আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। অপরদিকে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে। ক্ষমতায় আসতে না পারলে পরিণাম কী হবে সেটা নিয়ে এখন তারা চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। কারণ, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমিপরা প্রতিদিনই মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, ক্ষমতায় আসতে না পারলে পিঠের চামড়া থাকবে না, বাসাবাড়িতে থাকা যাবেন, রক্তের বন্যা বইয়ে যাবে। তাদের এসব বক্তব্যের কারণে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আর বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
এর আগে অ্যানালাইসি বিডির একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের টার্গেট দুইটি। প্রথমত: যেকোনোভাবে ক্ষমতা ধরে রাখা। আর সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দিয়ে শেখ হাসিনা তার দলবল নিয়ে নিরাপদে চলে যাওয়া। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতকে তারা কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে দেবে না।
এখন আওয়ামী লীগ মোটামোটি নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, তাদের প্রথম টার্গেট আর পূরণ হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের টার্গেট ছিল হামলা-ভাঙচুর, মামলা, গ্রেফতার ও মারধর ও গুরুত্বপূর্ণ প্রর্থীদের প্রার্থিতা স্থগিতের কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট নির্বাচন থেকে দূরে সরে যাবে। কিন্তু, ফলাফল হচ্ছে হিতে বিপরীত। নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা-ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা যতই হচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা আরও বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। সরকারের এই ফ্যাসিবাদী আচরণের কারণে দিন দিন ঐক্যফ্রন্টের তথা ধানের শীষের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন আরও বাড়ছে। আর আওয়ামী লীগের প্রতি বাড়ছে মানুষের ধিক্কার ও ঘৃনা।
বিশেষ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ভোট কেন্দ্র পাহারা দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের অস্থিরতা আরও বেড়ে গেছে। কারণ, তাদের বিগত দশ বছরের পরিকল্পনা সবই এখন ভেস্তে যাওয়ার পথে। এছাড়া বিরোধী জোট, বিশিষ্ট নাগরিক ও বিদেশিদের চাপের মুখে নির্বাচন কমিশনও শেষ মূহূর্তে এসে তাদের পাশ থেকে সরে যায় কি না এমন সন্দেহও ঢুকেছে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের লোকদের মনে। কারণ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদও আওয়ামী লীগের নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। ২০০১ সালে তার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেই ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব কারণে আওয়ামী লীগ এখন দ্বিতীয় টার্গেট বাস্তবায়নের পথেই হাটছে। এ কারণেই বিগত কয়েক দিন ধরে শেখ হাসিনা গুজব ছড়াচ্ছেন যে মুজিব কোট ও নৌকার ব্যাজ পরে বিএনপি জামায়াত সহিংসতা চালাবে। তারা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাবে। তারা পুলিশের উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে হত্যা করবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, শেখ হাসিনার এসব বক্তব্যের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের দলীয় ও নির্বাচনী অফিসে এবং প্রচার মিছিলে হামলা-ভাঙচুর, বোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির ঘটনা ঘটছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতিকে গোলাটে করার জন্য বিভিন্ন এজেন্সির লোক দিয়ে সরকারই এসব করাচ্ছে। দিন দিন এগুলো বাড়তেই থাকবে। বিএনপি-জামায়াতের ওপর দোষ চাপিয়ে যে কোনো সময় তারা নির্বাচন বন্ধ করে দিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিতে পারে।