অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
অবশেষে সমঝোতার বরফ গলেনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন হারুন ও বুলবুল উভয়েই। জামায়াত অধ্যুষিত এ সংসদীয় আসনে শেষ মুহুর্তে বিএনপি প্রার্থী আ: ওয়াহেদ মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করলেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থীতা বহাল রেখেছেন হারুনুর রশীদ। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল।
জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এখানে জামায়াতের বরাবরের লক্ষ্য হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনটিকে ঘিরে। এখানে বিএনপি-জামায়াতের লড়াই বহু পুরোনো। বিএনপি-জামায়াত জোট থাকলেও এ আসনে কখনোই তাদের জোটগত নির্বাচন হয়নি।
বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে জোট থেকে জামায়াতকে একটিও আসন দেওয়া হয়নি। তাই নিজেদের এ ভোটব্যাংকে অনড় অবস্থানে জামায়াত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনটি সদর উপজেলা ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এখানে উপজেলা চেয়ারম্যান, দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র জামায়াত সমর্থিত। বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই। ত্রিমুখী এ লড়াইয়ে বরাবরই বিজয়ী হয়েছেন জামায়াত মনোনীত প্রার্থীরা। পৌর মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৭৪ হাজার, বিএনপি ৬২ হাজার ভোট পেলেও জামায়াত প্রার্থী নজরুল ইসলাম ১ লক্ষ ৪ হাজার ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনের মধ্যে দুটি আসনেই বিজয়ী হয় জামায়াত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সদর আসনে দ্বিতীয়বারের মত এমপি নির্বাচিত হন জামায়াতের প্রার্থী লতিফুর রহমান। তাই এ আসন নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী জামায়াত।
জোটের আলোচনায় একক প্রার্থীর ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত না হওয়ায় এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে জোটের প্রার্থী হচ্ছেন দু’জন। এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন মোট আট জন। এদের মধ্যে বিএনপির আ: ওয়াহেদ ও জেএসডির মনিরুজ্জামান তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। অবশিষ্ট ৬ জন হলেন নুরুল ইসলাম বুলবুল (স্বতন্ত্র), আব্দুল ওদুদ (আ. লীগ), হারুনুর রশীদ (বিএনপি), আব্দুল কাদের (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), মোঃ বাবলু হোসেন (জাকের পার্টি), কামরুজ্জামান খান (বিএনএফ)।
বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের বেশি দমন পীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়েছে এই এলাকার বাসিন্দারা। যাদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম বুলবুল পূর্বে এ আসনে জামায়াতের নির্বাচিত এমপি লতিফুর রহমানের চেয়েও জনপ্রিয়তায় অনেকগুণ এগিয়ে। বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। দেশের অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন জনপ্রিয় কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। এলাকার মানুষের যে কোন প্রয়োজনে তিনি ছুটে যান আপন হয়ে। ফলে জনপ্রিয়তা যে কোনো দলের প্রার্থীর তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় তার জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত আলাদা আলাদা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা জামায়াত প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ জামায়াত প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বেশি। আর দল মত নির্বিশেষে সবাই এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় চায়।