অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এখানে জামায়াতের বরাবরের লক্ষ্য হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনটিকে ঘিরে। এখানে বিএনপি-জামায়াতের লড়াই বহু পুরোনো। বিএনপি-জামায়াত জোট থাকলেও এ আসনে কখনোই তাদের জোটগত নির্বাচন হয়নি।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিএনপি এবং জামায়াত উভয়েই প্রার্থী দিয়েছে এ আসনে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় সদস্য, ঢাকা দক্ষিণ শাখার আমির, ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। নিজেদের ব্যাপক জনসমর্থনের এই আসনটিতে এবারও বিএনপিকে ছাড় দিতে নারাজ জামায়াত।
আসনটি সদর উপজেলা ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। জাতীয় সংসদের ৪৫ নম্বর নির্বাচনী এলাকাটি জামায়াতের শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত। এখানে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়েরই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত। সদর উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা দুইটাই জামায়াতের কবজায় রয়েছে।
জামায়াতের জেলা শাখার নায়েবে আমির (সহসভাপতি) চাঁপাইনবাবগঞ্জের পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে যে জামায়াত শক্তিশালী, তা প্রমাণিত। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুজন ভাইস চেয়ারম্যন নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে আমি নির্বাচিত হই। এবারের সংসদ নির্বাচনেও জয়ের ব্যাপারে আমরা দারুণভাবে আশাবাদী। এ ছাড়া বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে জোট থেকে জামায়াতকে একটিও আসন দেওয়া হয়নি। তাই এ আসনে জামায়াত “স্বতন্ত্র” হিসেবে নির্বাচন করবে।’
১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনের মধ্যে দুটি আসন দখলে নেয় জামায়াত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সদর আসনে দ্বিতীয়বারের মত এমপি নির্বাচিত হন জামায়াতের লতিফুর রহমান। এখানে রয়েছে জামায়াতের বিশাল ভোট ব্যাংক।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদ নির্বাচিত হয়। ২০১৪ এর নির্বাচনে বিনা ভোটে এমপি হওয়ার পর থেকেই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস। তিনি নিজের পাল্লা ভারি করতে বিভিন্ন মামলার আসামিদের একের পর এক দলে টানা থেকে শুরু করে এলাকায় বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিতে থাকেন। এমনকি শোকের মাস আগস্টেও তার নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে বসতে দেখা যায় জুয়া এবং নাচ-গানের আসর। এ কয়দিনে দুর্নীতির মাধ্যমে টাকার পাহাড় বানিয়েছেন তিনি। যে কারণে নিজ দলের লোকেরাও তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।
এছাড়া বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের বেশি দমন পীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়েছে এই এলাকার বাসিন্দারা। দুর্নীতি অপকর্মের কারণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একাট্রা এলাকাবাসী। জামায়াতের আগের প্রার্থীর তুলনায় বর্তমান প্রার্থী বুলবুল অনেক বেশি জনপ্রিয়। বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। তার জনপ্রিয়তা যে কোনো দলের প্রার্থীর তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় তার জয় এখন সময়ের ব্যপার মাত্র।
এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সাংসদ হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘এখানে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বহু পুরোনো। এ জন্য এখানে কখনো জোটগত নির্বাচন হয়নি। তবে এবার মানুষের দাবি, সবার আগে আওয়ামী দুঃশাসন থেকে মুক্তি।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম বুলবুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এদিকে এ আসনে জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা–না করাটা রাজনৈতিক ও ভোটার মহলের একটি আলোচিত বিষয়।
স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত আলাদা আলাদা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা জামায়াত প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ জামায়াত প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বেশি। আর দল মত নির্বিশেষে সবাই এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় চায়।