আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৫ (মিরপুর-কাফরুল) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান। এ জন্য গতকাল সেগুন বাগিচায় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে তার পক্ষে দলটির নেতাকর্মীরা মনোনয়নপত্র কেনেন। দলটির ‘জাতীয় পার্লামেন্টারি বোর্ড’ অনেক আগেই তাকে ওই আসনে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে। দলটির নেতাকর্মীরা তাকে ওই আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। বিষয়টি জামায়াতের পক্ষ থেকে ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপিকেও জানানো হয়েছে। দীর্ঘ দিন থেকেই ডা: শফিকুর রহমান মিরপুর-কাফরুল এলাকায় সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন।
জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে এলাকার সমস্যা নিরসনের পাশাপাশি ব্যাপক উন্নয়ন ও একটি আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চান জামায়াতের এ শীর্ষনেতা।
দলটির সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিমের নেতৃত্বে ডা: শফিকুর রহমানের পক্ষে নেতাকর্মীরা তার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা, অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দীন, অ্যাডভোকেট মাঈন উদ্দীন, অ্যাডভোকেট রোকন রেজা শেখ, অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান, অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দীন খন্দকার, অ্যাডভোকেট শাহীন আখতার, অ্যাডভোকেট মীর নূরনবী উজ্জ্বল, অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দীন, অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান আজাদ, অ্যাডভোকেট জোবায়দুর রহমান বাবু, অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই চৌধুরী, অ্যাডভোকেট কে এম জসিম উদ্দীন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন, অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিক, ছাত্রনেতা সালাহউদ্দীন আইয়ুবী প্রমুখ। এ উপলক্ষে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের আশপাশে জমায়েত হতে থাকেন। জোহর নামাজের পর রিটার্নিং অফিস-সংলগ্ন এলাকা নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে।
জাতীয় সংসদের ১৮৮ নম্বর আসন ঢাকা-১৫। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪, ১৩, ১৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে এ সংসদীয় আসন গঠিত। ২০০১ সালে এ এলাকার এমপি ছিলেন বিএনপির এস এ খালেক। আসনটি ভাগ হওয়ার পর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির হামিদুল্লাহ খান (উইং কমান্ডার)। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর ওই আসনে নির্বাচন করার কথা ছিল। জোটের স্বার্থে জামায়াত আসনটি বিএনপিকে ছাড় দেয়। ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর হামিদুল্লাহ খান ইন্তেকাল করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার আবারো এমপি নির্বাচিত হন। ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগ এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার ভাই এখলাস উদ্দিন মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের অর্ধডজন নেতা এবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার দৌড়ে রয়েছেন। এর মধ্যে কামাল আহমেদ মজুমদার ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু, যুবলীগ ঢাকা উত্তরের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা এম সাইফুল্লাহ সাইফুলসহ কয়েকজন নেতা আলোচনায় রয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা মামুন হাসান আলোচনায় আছেন।
জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘ দিন থেকেই সারা দেশের মতো মিরপুর-কাফরুল এলাকায় সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে মীর কাসেম আলী ওই এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে ছিলেন। তার ইন্তেকালের পর বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: শফিকুর রহমান এলাকার মানুষের সেবায় নিয়োজিত হন।
জামায়াত সূত্রে জানা যায়, ডা: শফিকুর রহমান ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে স্থানীয় বরামচল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৬ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতে অংশ নিয়ে আর্তমানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৮৫ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি ডা: আমেনা বেগমের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্ত্রী অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা এমপি ছিলেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে এফসিপিএস (কার্ডিওলজি) অধ্যয়নরত এবং একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্টার হিসেবে কর্মরত। ছোট মেয়ে এমবিবিএস পাস করে একটি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকতা করছেন। একমাত্র ছেলে এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।
ডা: শফিকুর রহমান ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন তিনি। এরপর ১৯৭৩ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। তিনি সিলেট মেডিক্যাল কলেজ সভাপতি ও সিলেট শহর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবন শেষ করে ১৯৮৪ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেন ডা: শফিকুর রহমান। পরে তিনি সিলেট শহর, জেলা ও মহানগর আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ডা: শফিকুর রহমান কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং ২০১৬ সালে সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত হয়ে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ডা: শফিকুর রহমান রাজনীতির পাশাপাশি সমাজসেবায় অবদান রেখে যাচ্ছেন। তিনি একজন দক্ষ সংগঠক এবং সফল উদ্যোক্তাও। তিনি একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ডা: শফিকুর রহমান অনেক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একাধিক এতিমখানা, দাতব্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন মসজিদ, ক্লাব ও ছাত্রাবস্থায় স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ক্লাব ‘পাল্সের’ প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া একাধিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে আসছেন। তিনি সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) আজীবন সদস্য এবং সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য। তিনি পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরব ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিতে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, গ্রিস, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।
ডা: শফিকুর রহমান রাজনীতি করতে গিয়ে ছাত্রাবস্থায় ১৯৮২ সালে কারাবরণ করেন। বর্তমান সরকারের আমলেও তিনি বারবার হামলা-মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন।
ডা: শফিকুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, মিরপুর-কাফরুল এলাকায় বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটার ও বিপুল মানুষ বসবাস করেন। এলাকার অসংখ্য কলকারখানা, গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কুটির শিল্প, গার্মেন্টস শিল্পসহ অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতঃপূর্বে এ এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সফল উদ্যোক্তা, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী অনেক অবদান রেখেছেন। এ সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে পারলে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব। তিনি বলেন, এলাকাটিতে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য চলছে। মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন না। এ জন্য এলাকার টেকসই উন্নয়নে একজন সৎ, যোগ্য ও নিষ্ঠাবান জনপ্রতিনিধি প্রয়োজন।
জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করা হবে জানিয়ে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, নাগরিক হিসেবে ধর্মীয় পার্থক্য কারো অধিকার খর্ব করে না, একই সাথে কোনো ধর্মের অনুসারীদের হস্তক্ষেপ কিম্বা কোনো জোর-জুলুম করার অধিকার কোনো ধর্ম দেয়নি। এ জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
সূত্র: নয়াদিগন্ত