অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
চট্টগ্রামে শিবিরের বন্ধ কার্যালয়ে বোমা বিষ্ফোরণের নাটক সাজিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (দক্ষিন) উপ-কমিশনার মেহেদী হাসান। স্বয়ং পুলিশের হেডকোয়ার্টারও তার এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শিবিরের বন্ধ কার্যালয়ে ঢুকে বোমা রেখে এসে বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটায়। পরে মিডিয়াকে ডেকে এনে এটা শিবিরের কাজ বলে চালিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছেন মেহেদীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি ছোট দল কার্যালয়ে ঢোকার পরই বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে তার সাজানো নাটক ভেস্তে যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শিবিরের এ কার্যালয়টি বন্ধ রয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বরও পুলিশ এই বন্ধ অফিসে অভিযান চালিয়ে ভাংচুর করেছে। তখন সেখানে কিছুই পায়নি পুলিশ। পুলিশের হয়রানীর কারণে এ অফিসটি বহুদিন থেকেই বন্ধ রয়েছে। অফিসটিকে সব সময়ই পুলিশ তাদের নজরদারীর মধ্যে রাখে। যে অফিসটি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ এবং পুলিশি পাহারায় রয়েছে সেখানে কিভাবে বোমা বিষ্ফোরণ ঘটতে পারে? এলাকাবাসীর কাছে এমন সাজানো নাটককে খুবই হাস্যকর মনে হয়েছে।
তাছাড়া পুরো এলাকা কর্ডন করে রেখে তল্লাশি চালানোর পরও তারা কোনো শিবির কর্মীকে ধরতে পারেনি। তার মানে এটা পরিষ্কার যে সেখানে কোনো শিবিরকর্মীই ছিলো না। পুলিশ বলেছে শিবিরকর্মীরা সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু কোন সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে গেছে সেটা তারা দেখাতে পারেনি। এডিসি মেহেদীর এসব সাজানো নাটক নিয়ে জনমনে তো ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছেই। ক্ষোভ তৈরি হয়েছে স্থানীয় পুলিশের মধ্যেও।
বিতর্কিত এই পুলিশ কর্মকর্তা এর আগে ঢাকায় এডিসি থাকাকালীন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের ঘিরে রেখে বোমা উদ্ধারের নাটক করেছিল। তাণ্ডব চালিয়েছিলো বিএনপি কার্যালয়ে। তার এই অপকর্ম তখন সারাদেশে ব্যপক সমালোচিত হয়েছিল। টেলিভিশনে তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখে দেশের মানুষ হতবাক হয়েছিলো।
এরপর কুষ্টিয়ায় থাকাকালে তার প্রত্যক্ষ ইন্ধনেই গত ২২ জুলাই কুষ্টিয়ায় আদালত প্রাঙ্গণে আমারদেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের উপর ছাত্রলীগ নৃশংস হামলা চালায়। সে-ই মূলত ছাত্রলীগকে সুযোগ করে দেয় মাহমুদুর রহমানের উপর হামলা চালানোর জন্য।
ঢাকা এবং কুষ্টিয়ায় পুলিশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করার পর এবার এই বিতর্কিত মেহেদী চট্টগ্রামে শিবিরের বন্ধ কার্যালয়ে বোমা বিষ্ফোরণের নাটক সাজিয়ে চট্টগ্রামের পুলিশের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন করা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
জানা যায়, এডিসি মেহেদী হাসান কট্টর আওয়ামী পরিবারের সন্তান। ছাত্রজীবনে সে ছিলো ছাত্রলীগের দুর্ধর্ষ ক্যাডার। সেই সুবাদে শেখ হেলাল এমপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তার। সরকারের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা এই দাপুটে পুলিশ কর্মকর্তার ভয়ে তটস্থ তার সিনিয়র অফিসাররাও। অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই তার বিরুদ্ধে ঘৃণা, ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে চট্টগ্রামের স্থানীয় পুলিশও তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রে রিপোর্ট দিয়েছে বলে জানা গেছে। তার এমন বাড়াবাড়িতে পুলিশের হেডকোয়ার্টারও তার উপর ক্ষুব্ধ। কিন্তু আওয়ামী লীগের উপরের স্তরের নেতাদের সাথে মেহেদীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না পুলিশ সদর দপ্তর।