অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আমরা এমনই একটা প্রজন্ম যা সময়ের ব্যস্ততায় অনেক কিছুই ভুলে যাই। আবার হয়তো বিষয়টা মাথায় আসে যখন সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখি। বিগত ১০ বছরের আওয়ামী শাসনে কত মানুষ যে বিচার বহির্ভুত হত্যার শিকার হয়েছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়াও কঠিন। তবে বিষয়টা যে ভয়াবহ মাত্রায় সেটা বোধহয় সকলেই জানেন। অথচ এই গুরুতর বিষয়টিও আমরা অনেক সময় ভুলে যাই।
অতিসম্প্রতি নারায়নগঞ্জে একসাথে ৪ যুবকের লাশ পাওয়ার ঘটনায় এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যার বিষয়টা আবারো আলোচনায় আসে। কি আশ্চর্য, ফাঁড়িতে আগের দিন রাতেও যেই যুবকগুলো জীবিত ছিল তারা পরের দিন লাশ হয়ে কিভাবে হাইওয়েতে পড়ে থাকে? আবার একই দিন উত্তরার দিয়াবাড়ীতেও লাশ পাওয়া যায় আরো ৩ যুবকের।
পুলিশের এই আচরণ তো খুনীর মত, আইনরক্ষকের মত নয়। অথচ প্রশাসনিকভাবে কোন তোয়াক্কাই করা হচ্ছেনা এই বিষয়টির। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বার বার বলেছেন প্রতিটি ঘটনারই নাকি বিভাগীয় তদন্ত হয়। নিরীহ কাউকে হত্যা করা হলে নাকি দোষী পুলিশের বিচারও করা হবে। আজ পর্যন্ত কেউ কি শুনেছেন যে বিচারবহির্ভুত হত্যার জন্য একজন পুলিশেরও বিচার হয়েছে? জনগনের জীবনকে নিয়ে এভাবে কোন সরকার আর ছিনিমিনি খেলেনি, খেলতে পারেনি।
একটু আগেও খবরে জানলাম, তথাকথিত মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ৩৫৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে দুই মাসে। আটকের সংখ্যা কয়েক হাজার। একই সংবাদে এটাও জানা যাচ্ছে যে, এই সব হত্যাকান্ডের পরও মাদক ব্যবসা চলছে আগের মতই। প্রতিবেদকের ভাষ্যমতে মাদক ব্যবসার মুল হোতা সরকারী দলের নেতাকর্মীদের আটক না করা এবং অভিযানের আড়ালে বিরোধী দলের কর্মীদেরকে শায়েস্তা করার টার্গেট থাকায় এই অভিযানের কাঙ্খিত সুফল পাওয়া যায়নি।
হাজার হাজার ভিকটিম পরিবার আছে যারা সময় হলে নিশ্চয়ই স্বাক্ষ্য দেবেন যে, কিভাবে তাদেরকে পুলিশ ক্রসফায়ারে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল। প্রতিটি ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের একই গল্প। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেই যাচ্ছে। আর দেশবাসী যারা শুনছেন তারা বিশ্বাস করছেন না- এটাই যেন চরম বাস্তবতা। কিন্তু মানুষগুলো তো চলে যাচ্ছে।
অথচ এই আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা ক্ষমতায় আসতে পারলে সব ধরনের বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড বন্ধ করবে। অথচ সেই পথে তো তারা যায়নি, বরং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বাক স্বাধীনতা ও জনগনের অন্যন্য অধিকারগুলো কেড়ে নেয়া হচ্ছে। নতুন করে আরো যোগ হয়েছে কাউকে তুলে নিয়ে গোপন প্রকোষ্ঠে আটকে রাখার নতুন কৌশল।