অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার পর এবার সরকারের বদ নজর পড়েছে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সদস্য মাহবুব তালুকদারের ওপর। বিচার বিভাগের মতো নির্বাচন কমিশনও একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদেরকে নিয়োগ দিয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি। তবে, সবকিছু নির্বাহী বিভাগের ইশারাতেই হয়। কারণ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া রাষ্ট্রপতি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
গত কয়েক মাস ধরেই নির্বাচন কমিশনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চলছে। অর্থাৎ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার, সেনা মোতায়েন, এমপিদের আচরণ বিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বিষয়সহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার ও সচিবের সঙ্গে মাহবুব তালুকদারের মতবিরোধ চলে আসছে।
বিষয়টি এতদিন নিজেদের মধ্যে থাকলেও এখন এটি প্রকাশ্যে চলে আসছে। বিশেষ করে ইসির দুইটি বৈঠক থেকে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বেরিয়ে আসার পর বিষয়টি গণমাধ্যমে চলে আসে।
গত ৩০ আগস্ট ইভিএম নিয়ে বৈঠকে কথা বলার সুযোগ না পেয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বেরিয়ে আসেন মাহবুব তালুকদার। ওই সময় এনিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়নি। ওবায়দুল কাদের এবং হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, দ্বিমত প্রকাশ করা এটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এগুলো নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
আর গত ১৫ অক্টোবর বাকস্বাধীনতা হরণের অভিযোগ এনে ইসির বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন মাহবুব তালুকদার। এনিয়ে ১৬ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ক্ষুব্ধ প্রক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, একজন কমিশনারের কারণে ইসি পুনর্গঠনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটাতো নিরাপত্তা নয় যে, একজন দ্বিমত প্রকাশ করলে প্রস্তাব পাস হবে না। এরপর বুধবার আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বলেছেন, মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাব সংবিধান বিরোধী। তিনি প্রকাশ্যে কথা বলে শপথ ভঙ্গ করেছেন। এ পদ থেকে তার সরে যাওয়া উচিত।
একজন মন্ত্রীর মুখ দিয়ে একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নাসিম সরকার এবং দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার কথা মানেই সরকার ও দলের কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে সরে যাওয়ার জন্য মাহবুব তালুকদারের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ৩০ আগস্টের ঘটনায় সরকার চুপ থাকলেও এখন আর তারা মাহবুব তালুকদারকে মেনে নিতে পারছে না। কারণ, মাহবুব তালুকদারের কারণে আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যেতে পারে। আওয়ামী লীগ বড় একটা টার্গেট নিয়েই নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে বসিয়েছে। বাকী কমিশনাররাও আওয়ামী লীগেরই লোক। এরপর একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হেলালউদ্দিনকে বসিয়েছে নির্বাচন কমিশনের সচিব পদে। মূলত নির্বাচন কমিশন চলে এখন সচিবের নির্দেশেই। বলা যায় নির্বাচন কমিশন এখন আওয়ামী লীগের একটি সাজানো সংসার। সরকার কোনো ভাবেই মাহবুব তালুকদারের দ্বারা এই সাজানো সংসার ভাঙতে দেবে না। প্রয়োজনে তাকে এখান থেকে সরিয়ে দেবে।
জানা গেছে, সরকারের অতিরিক্ত চাপের কারণে হঠাৎ করেই মাহবুব তালুকদার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও তিনি বলছেন যে, ভাই এবং ছেলেকে দেখতে যাচ্ছেন। তালুকদারের ঘনিষ্টজনদের মাধ্যমে জানা গেছে, মানসিক চাপের কারণে তিনি মূলত যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন। কারণ, আর মাত্র ১০ দিন পরই আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এনিয়ে আগামী সপ্তাহে ইসিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিংও আছে।
বিশিষ্টজনসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, যত বড় কাজই হোক এ মুহূর্তে মাহবুব তালুকদারের বিদেশ যাওয়ার কথা নয়। সরকারের চাপের কারণে তিনি বাইরে চলে যাচ্ছেন। আর নাসিমের বক্তব্য থেকেই প্রমাণিত যে সরকার তার ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করছে। কেউ কেউ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর মাহবুব তালুকদার আর দেশে নাও ফিরতে পারেন।