জামায়াতকে ছাড়া কোনো বৃহত্তর ঐক্য জোট হবে না বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ। তিনি বলেছেন, আমরা জামায়াতকে দেখেই ২০ দলীয় জোটে এসেছি। জামায়াতকে ছাড়া কোনো বৃহত্তর ঐক্য জোট হবে না।
শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এলডিপির প্রধান কার্যালয়ে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের এলডিপিতে যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এলডিপি মহাসচিব বলেন, জামায়াত বিষয়ে ড. কামাল হোসেন কোনো দ্বিমত করেননি। মাহী বি. চৌধুরী নানাভাবে চেষ্টা করছে যাতে জোট না হয়। জামায়াতকে ছাড়া কোনো জোট হবে না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। সরকার ও বিরোধী দলকে নমনীয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অলি আহমেদ বলেছেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, রক্তপাত অবশ্যম্ভাবী। আগামী মাস থেকে বিরোধীদল এবং সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হবে। এই সংঘর্ষে কতো প্রাণ যাবে তার কোনো সীমারেখা নাই। এটা এড়াতে হলে সরকার ও বিরোধী দলগুলোকে নমনীয় হতে হবে। আলোচনায় বসতে হবে। উভয়পক্ষকে সমঝোতার মাধ্যমে জনগণকে পথ দেখাতে হবে।
অলি আহমদ বলেন, নিজ নিজ জায়গায় অহংকার নিয়ে বসে থাকলে দেশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। উন্নয়নের রাজনীতি আইউব খানও করেছিল। উন্নয়নের রাজনীতি দিয়ে গণতন্ত্র চলে না। সেতু আর রাস্তা করে মানুষের পেট ভরে না। বর্তমান সরকার যেভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাতে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এখন সরকারের বিরুদ্ধে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ অবস্থান নিয়েছে। দেশের জন্য এটাও ভাল নয়।
‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’র বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি, যতো লোককে নিয়ে পারা যায় ঐক্য করা ভালো। (বিকল্প ধারার সভাপতি) ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী যখন বিএনপির মহাসচিব ছিল, তখন মুসলিম লিগের শাহ আজিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জয়পুরহাটের সাজাপ্রাপ্ত (যুদ্ধাপরাধী) আব্দুল আলীম রেলমন্ত্রী ছিলেন। এ ধরনের অনেকেই বিএনপিতে ছিল। ডা. বদরুদ্দোজা সাহেব তাদের মহাসচিব ছিলেন। তাহলে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্যে পার্থক্য হচ্ছে কেন? মাংস হালাল, আর ঝোল হারাম, এটা কেন?
ঐক্য গড়তে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে বি. চৌধুরীর শর্তের বিষয়ে এলডিপি সভাপতি বলেন, বি. চৌধুরী সাহেব যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তখনতো মুজাহিদ ও নিজামী সাহেব মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। আমিতো সেদিন মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলাম না। দোকানদারদের কাছে যারা পরাজিত হয়েছেন, যাদের পেছনে কোনো লোক নেই। তাদের মাহাথির মোহাম্মদ বানানো যাবে না। মাহাথির মোহাম্মদ মালশিয়ার জন্মদাতা। আধুনিক মালয়েশিয়ার নির্মাতা। যার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নেই। আর আমরাতো ছেলের কাছেই বিক্রি হয়ে যাই। আমাদের ছেলেরা(মাহী বি চৌধুরী) ভিওআইপির ব্যবসা করে। আমাদের ছেলেরা মানে যারা আজকে ঐক্যজোটে তাদের অনেকের ছেলে ভিওআইপির ব্যবসা করে। তাহলে ভিওআইপির ব্যবসা কার থেকে নিয়েছে? আওয়ামী লীগের কাছ থেকে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে নিয়েছে। আর এদিকে বলছে আমরা ঐক্য করছি। রুমের ভেতরে থাকলে এক রকম, বাইরে বের হলে অন্য রকম। কখনো বলে ঐক্যজোটে আছি কখনো বলে ঐক্যজোটে নেই।
অলি আহমদ বলেন, পত্রিকায় দেখলাম পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রধানমন্ত্রীকে পুনরায় রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দেখতে চান। তিনি যে কখন আওয়ামী লীগে যোগদান করলেন এ বিষয়টা আমার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, এ ধরনের বড় চামচ যদি আপনার সঙ্গে থাকে আপনার ক্ষতি হবে। এ ধরনের মাখমবাজেরা আপনার অধীনে থাকা উচিত নয়।
দেশের আইনের শাসন নেই দাবি করে তিনি বলেন, দেশে যদি আইনের শাসন থাকতো, তাহলে (বিএনপি প্রধান) খালেদা জিয়া একটা ‘মিথ্যা’ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হতেন না। আমরা এই মিটিং থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি।
কর্নেল (অব.) অলি আহমদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, গণতান্ত্রিক মহিলা দলের সভাপতি অধ্যাপিকা খালেদা খাতুন প্রমুখ।
তথ্যসূত্র: বাংলানিউজ