অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ধানমন্ডির জিগাতলা এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশ টিয়ার শেল ও লাটিচার্জ করেছে। ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে একটি মিছিল লক্ষ্য করে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। আজ দুপুর একটায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় ধানমন্ডির ৩/এ-তে অবস্থিত সভানেত্রীর কার্যালয়ের চারপাশ ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাবি কার্যালয়ের দিকে আসা মিছিলটি ছিল ছাত্রদলের।
পুলিশের নিক্ষেপিত টিয়ারশেলে অত্র এলাকায় অবস্থান নেয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও আক্রান্ত হন। তাদের আগুন জ্বালিয়ে টিয়ারশেল থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে দেখা গেছে এ সময়।
সকাল থেকেই ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ অফিসে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল দিনভর জিগাতলা এলাকার সংঘর্ষ ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢিল ছুড়ে মারার ঘটনায় বাড়তি সতর্কতার জন্যই এ উপস্থিতি। তবে এই সতর্কতায় দুপুর থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে জো আলাচনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে হামলা চালাতে পারে। এমন গুজবে ধানমন্ডির ৩/এ-তে ভিড় বাড়ছে। কার্যালয় ঘিরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক নেতকর্মীরা জমায়েত হয়েছে। কার্যালয়ের ভেতরে সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপসহ বেশকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত থেকে টেলিভিশনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
ফার্মগেটে হঠাৎ উত্তেজনা, হামলা
নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর ফার্মগেটে এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির একদল শিক্ষার্থীর মিছিলের ওপর হামলা হয়েছে। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফার্মগেট মোড়ের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে এই হামলা হয়।
ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের কাছের এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির একদল শিক্ষার্থী দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিছিল বের করে। ক্যাম্পাস থেকে মিছিলটি ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছিল। চার রাস্তার মোড়ে আসার আগেই একদল তরুণ মিছিলটির ওপর হামলা করে। এসব তরুণের মাথায় হেলমেট ছিল। এরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলের ওপর হামলা করে। মুহূর্তেই মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মিছিলকারীরা এরপর ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। হামলাকারীরা ইউনিভার্সিটির ভবনের কাচ ভাঙচুর করে। ১৫ মিনিট পরে হামলাকারীরা চলে যায়।
রামপুরায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
রামপুরায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
রামপুরা ওভারব্রিজ এলাকায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরাও তাদের পাল্টা ধাওয়া করে। বেশ কয়েকবার শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক স্কুলছাত্র আহত হয়েছে।
পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও এ ঘটনায় তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। তারা এ হামলা প্রতিহত করার কোনো চেষ্টা করছে না। বর্তমানে সেখানকার অবস্থা উত্তপ্ত।
শাহবাগে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ
রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
রোববার সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ঝিগাতলায় ছাত্রলীগের হামলার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরির দিকে যান।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় সায়েন্স ল্যাবরেটরি-এলিফ্যান্ট রোড-মৎস্য ভবন-বাংলামোটর পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা সিটি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহম্মদ কলেজসহ বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
তাদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
শিক্ষার্থীরা নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ, ছাত্রলীগের হামলার বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগান দেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে লাগাতার ছাত্র আন্দোলনের সপ্তম দিনে শনিবার দুপুরে ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়কে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
রড-লাঠি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগসহ সরকারদলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া করে। পরে উভয় পক্ষে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে।
হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হেলমেট পরিহিত কয়েক জনকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করতে দেখা যায় বলে শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
পরে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন ভিডিওতে গুলি চালানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের মুহুর্মুহু ইট-পাটকেলের মুখে হেলমেট পরা অস্ত্রধারী যুবকরা পিছু হটছে।
গতকাল ঝিগাগতলা এলাকার ওই সংঘর্ষে দেড় শতাধিক মানুষ আহত হন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল স্কুলকলেজ পড়ুয়া শিশু ও কিশোর।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, মানবজমিন ও শীর্ষনিউজ